Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

নভেম্বর মাসে আকাশে ১০টি নজরকাড়া ঘটনা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ এএম

নভেম্বর মাসে আকাশে ১০টি নজরকাড়া ঘটনা

আকাশপ্রেমীদের জন্য নভেম্বর মাস এক দারুণ উৎসবের বার্তা নিয়ে এসেছে। মাস শুরু হচ্ছে সন্ধ্যার আকাশে বুধ গ্রহের ঝলমলে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে, এরপর একে একে দেখা মিলবে তিনটি উল্কাবৃষ্টির। বছরের বৃহত্তম পূর্ণিমা দেখা যাবে মাসের প্রথম দিকেই, আর মাসের শেষে থাকবে এক ‘মাইক্রো’ অমাবস্যা, যা Orion (কালপুরুষ) ও Taurus (বৃষ) এর মতো দুর্লভ নক্ষত্রপুঞ্জ দেখতে আদর্শ অন্ধকার তৈরি করবে।

নভেম্বরে রাতের আকাশে চোখ রাখতে পারেন এমন ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং কখন তাদের দেখা মিলবে, তার বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো:

১. বুধ গ্রহের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থান (১–২ নভেম্বর)

সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধকে সাধারণত দেখা কঠিন। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম দুই সন্ধ্যায় বুধ রাতের আকাশে তার সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠবে, যা এটিকে খালি চোখে দেখার জন্য বছরের অন্যতম সেরা সুযোগ দেবে। দ্রাঘিমাংশের ওপর এর উচ্চতা নির্ভর করবে—নিরক্ষরেখার যত কাছাকাছি যাওয়া যাবে, তত উপরে দেখা যাবে।

২. দক্ষিণ টরিড উল্কাবৃষ্টির শিখর (৪–৫ নভেম্বর)

দক্ষিণ টরিড উল্কাবৃষ্টির দ্বিতীয় শিখর এই সময়ে। এটি সাধারণত দুর্বল উল্কাবৃষ্টি (ঘণ্টায় প্রায় ৫টি), তবে মনে করা হচ্ছে ২০২৫ সাল একটি বিরল ‘ফায়ারবল সোয়ার্ম ইয়ার’ হতে চলেছে, যেখানে শুক্রের থেকেও উজ্জ্বল উল্কা আকাশ আলোকিত করতে পারে। ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে ৫ নভেম্বর ভোরের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে।

৩. সুপার ‘বিভার মুন’ (৪–৫ নভেম্বর)

নভেম্বরের পূর্ণিমা চাঁদ ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটের (১৩:১৯ ইউটিসি) দিকে সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতায় পৌঁছাবে। তবে ৪ ও ৫ নভেম্বর রাতের আকাশেও এটি পূর্ণ দেখা যাবে। এই চাঁদ ‘বিভার মুন’ নামে পরিচিত। এটি একটি ‘সুপারমুন’—যখন পূর্ণিমা চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে (perigee) আসে। এর ফলে চাঁদকে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে এবং এটি হবে ২০২৫ সালের বৃহত্তম পূর্ণিমা চাঁদ।

৪. চাঁদ ও কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জের নৈকট্য (৬ নভেম্বর)

পূর্ণিমার ঠিক পরে, ৬ নভেম্বর রাতে চাঁদ কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জের (Messier 45) খুব কাছাকাছি চলে আসবে। এদের দূরত্ব হবে মাত্র ১ ডিগ্রিরও কম (নির্দিষ্টভাবে ৪৯ আর্ক মিনিট)। এই কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ ১,০০০টিরও বেশি উজ্জ্বল ও তরুণ নক্ষত্র নিয়ে গঠিত, যা ‘সাত বোন’ (Seven Sisters) নামেও পরিচিত।

৫. উত্তর টরিড উল্কাবৃষ্টির শিখর (১১–১২ নভেম্বর)

মাসের দ্বিতীয় উল্কাবৃষ্টি, উত্তর টরিড, ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে ১২ নভেম্বর ভোরের মধ্যে শিখরে পৌঁছাবে। এটিও দুর্বল উল্কাবৃষ্টি (ঘণ্টায় প্রায় ৫টি), তবে দক্ষিণ টরিডের সঙ্গে যখন এরা একত্রে ঘটে, তখন উজ্জ্বল ফায়ারবল দেখার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই দুই টরিড উল্কাবৃষ্টির উৎস একই—এঙ্কে ধূমকেতুর রেখে যাওয়া ধূলিকণার পথ।

৬. লিওনিড উল্কাবৃষ্টির শিখর (১৭–১৮ নভেম্বর)

১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে ১৮ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত লিওনিড উল্কাবৃষ্টি শিখরে পৌঁছানোর কথা। পৃথিবী যখন টেম্পেল-টাটল ধূমকেতুর রেখে যাওয়া আবর্জনার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে, তখন এই দৃশ্য দেখা যাবে। ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ মাত্র ৯ শতাংশ পূর্ণ থাকায় উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য আকাশ থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। সাধারণত ঘণ্টায় ১৫টি পর্যন্ত উল্কা ঝরতে পারে।

৭. একটি ‘মাইক্রো নিউ মুন’ বা ক্ষুদ্র অমাবস্যা (২০ নভেম্বর)

২০ নভেম্বর যে অমাবস্যা হবে, তা চাঁদ তার কক্ষপথে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে (apogee) থাকার কারণে হবে, তাই এটি একটি ‘মাইক্রো নিউ মুন’ হিসেবে পরিচিত। যেহেতু এটি অমাবস্যা, চাঁদকে একেবারেই দেখা যাবে না—তবে চাঁদের আলো না থাকায় এটি হবে মাসটির গভীর মহাকাশের বস্তু, যেমন নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকা এবং দূরবর্তী ছায়াপথগুলি খালি চোখে, বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপে দেখার সেরা রাত।

৮. ইউরেনাসের প্রতিপক্ষা (২১ নভেম্বর)

সৌরজগতের দূরতম গ্রহ ইউরেনাস ২১ নভেম্বর ‘প্রতিপক্ষা’য় পৌঁছাবে, অর্থাৎ এটি পৃথিবীর আকাশ থেকে সূর্যের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান করবে। এই সময় গ্রহটি তার সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতায় জ্বলবে (মান +৫.৬), যদিও এটি এখনও বেশ ক্ষীণ। মেষ রাশিতে বাইনোকুলারের সাহায্যে ইউরেনাসকে তারার মতো দেখা যাবে। শক্তিশালী টেলিস্কোপে এটি একটি ক্ষুদ্র নীল-সবুজ চাকতির মতো মনে হবে।

৯. হায়েডিস নক্ষত্রপুঞ্জের আদর্শ অবস্থান (২৭ নভেম্বর)

নভেম্বরের শেষের দিকে হায়েডিস মুক্ত নক্ষত্রপুঞ্জ (open star cluster) দেখার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত অবস্থানে থাকবে এবং স্থানীয় সময় মধ্যরাতের দিকে এটি রাতের আকাশে তার সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাবে। পৃথিবী থেকে মাত্র ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বৃষ রাশিতে থাকা এই V-আকৃতির নক্ষত্রপুঞ্জটিকে বলদের মুখ হিসেবে কল্পনা করা হয়।

১০. নক্ষত্রমণ্ডলগুলির প্রত্যাবর্তন

নভেম্বর মাস জুড়ে উত্তর গোলার্ধের শীতকালীন এবং দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালীন নক্ষত্রমণ্ডলগুলি প্রধান দৃশ্যপটে ফিরে আসতে শুরু করবে। এর মধ্যে রয়েছে মৃগশিরা (Orion), যা তার বিখ্যাত তিন-তারার বেল্টের জন্য সহজেই শনাক্ত করা যায়, এবং বৃষ (Taurus), যেখানে হায়েডিস নক্ষত্রপুঞ্জ এবং উভয় টরিড উল্কাবৃষ্টির উৎপত্তি দেখা যায়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার