Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসী পারাপারে দীর্ঘ বিরতি

Icon

ইনফোমাইগ্রেন্টস

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ এএম

ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসী পারাপারে দীর্ঘ বিরতি

গত ১১ দিন ধরে ফরাসি উপকূল থেকে ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কোনো অভিবাসী যুক্তরাজ্যে আসেননি, যা এই বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতি৷

ব্রিটিশ হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ গত ২২ অক্টোবর ছোট নৌকায় করে অভিবাসীরা ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার চেষ্টা আপাতত বন্ধ রয়েছে৷

২৩ অক্টোবর ‘বেঞ্জামিন’ নামের ঝড়ের প্রভাবে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের উপকূলে এবং ইংলিশ চ্যানেলে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা হাওয়া বইছিল৷ পরের কয়েকদিন পর্যন্ত এমন অবস্থা বিরাজ করছিল৷

২৩ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ দিনের এই বিরতি চলতি বছরের আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে৷ এর আগে ২৭ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিন ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ উপকূলমুখী অভিবাসীবাহী নৌকা বন্ধ ছিল৷

চলতি বছর ৩৬ হাজার ৯৫৪ জন অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷ সংখ্যাটি ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় মাত্র সাত ভাগ কম (৩৯ হাজার ৯২৯)৷

২০১৮ সাল থেকে ছোট নৌকার হিসাব রাখতে শুরু করেছে ব্রিটিশ সরকার৷ পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৫ হাজার ৭৭৪ জন অভিবাসী ছোট নৌকা নিয়ে দেশটিতে এসেছিলেন৷ 

কিন্তু চলতি বছর আসা অভিবাসীর সংখ্যা ২০২৪ সালের ৩৬ হাজার ৮১৬ জন এবং ২০২৩ সালের ২৯ হাজার ৪৩৭ জনকে ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে৷ 

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার চেষ্টা থামাতে এ বছর ফ্রান্সের সঙ্গে অভিবাসী প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত একটি চুক্তি সই করে যুক্তরাজ্য৷ এর আওতায়, চ্যানেল পেরিয়ে আসা সব অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে এবং সমান সংখ্যক অভিবাসীকে আইনি পথে ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ দেয়া হবে৷

সেই ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তির কার্যকরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ বিনিময়ে ৫১ জন যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন৷

হোম অফিস শুক্রবার নিশ্চিত করেছে, ৩০ অক্টোবর একটি ফ্লাইটে ২০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ এর আগের সপ্তাহে আরো ১৩ জনকে পাঠানো হয়েছিল৷

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জোর দিয়ে বলেছেন, ছোট নৌকা ঠেকাতে তার পরিকল্পনা সঠিক পথে আছে৷ যদিও একজন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর এক মাস পর, গত ১৮ অক্টোবর ছোট নৌকায় চড়ে আবারও যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন৷

রক্ষণশীল দলের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিল্প এই চুক্তির সমালোচনা করেছেন৷ বলেছেন, ‘‘পরিষ্কার বোঝা যায়, এটা কোনো প্রতিরোধ নয়৷’’

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের বর্ডার সিকিউরিটি কমান্ডার মার্টিন হিউইট গত মাসে ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আমাদের কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন তারা তাদের পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব দেখতে শুরু করেছেন৷ কারণ পাচারকারীরা মানুষকে চ্যানেল পার করানোর পদ্ধতি বদলাচ্ছে৷’’

অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, পাচারের পথ পুরোপুরি বন্ধ করতে আরো সময় প্রয়োজন৷

এদিকে, মানবপাচার নিয়ন্ত্রণে জড়িত চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে নতুন আইন তৈরি করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য৷ এ আইনের মাধ্যমে মানবপাচারকারী চক্রগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবে যুক্তরাজ্য৷ এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতা দেয়ার বিধানটি আইনে যুক্ত করতে চায় সরকার৷ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এ সংক্রান্ত বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ছোট নৌকা পারাপারকে ‘‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, পাচারকারীরা ‘‘আমাদের সীমান্তে তাণ্ডব চালাচ্ছে৷’’

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘হোম সেক্রেটারি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সীমান্ত রক্ষা করা আমার অগ্রাধিকার এবং আমি আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের বিকল্প খুঁজে দেখব৷’’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার