Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সহায়তা বন্ধ, সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী কারা?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৫ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সহায়তা বন্ধ, সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী কারা?

শাটডাউন পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা তহবিল চালু রাখতে হবে, ফেডারেল বিচারকদের এমন রায় সত্ত্বেও শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্ল্যাপ সুবিধা বন্ধ করে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ জানায়, সহায়ক তহবিল চালু হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন হিলেয়ারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা।

৬৩ বছর বয়সী উইলি হিলেয়ার একজন কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকান। বাস্তুহীন, বেকার এ বৃদ্ধ ও তার দুই নাবালক নাতীর মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর নিউ ইয়র্ক সিটির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে।

খাদ্য সহায়তা বা স্ল্যাপ সুবিধাভুক্ত হিলেয়ার এতদিন তার নাতীদের জন্য খাবার যোগান দিতেন ফুড ব্যাংক থেকে। অন্যদিকে মানবিক সংস্থা হলি অ্যাপোস্টলেস স্যুপ কিচেন অ্যান্ড প্যান্ট্রি থেকে পাওয়া স্যুপ গত কয়েক মাস ধরে তার একমাত্র খাবার।

খাবারের জন্য অ্যাপোস্টলেসের দীর্ঘ লাইনে থাকা হিলেয়ার জানান, শাটডাউনে খাদ্য সয়াহতা বন্ধের পর তিনি শুধু স্যুপ খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগটিও হারাচ্ছেন।

খাদ্য সহায়তা না পেলে নিজে না খেয়ে নাতীদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

শাটডাউন পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা তহবিল চালু রাখতে হবে, ফেডারেল বিচারকদের এমন রায় সত্ত্বেও শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্ল্যাপ সুবিধা বন্ধ করে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ জানায়, সহায়ক তহবিল চালু হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে।

এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন হিলেয়ারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানরা।

অ্যামেরিকার মোট জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ১২ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকান, যাদের এক চতুর্থাংশই খাদ্য সহায়তার অন্তর্ভুক্ত।

স্ল্যাপ আওতাভুক্ত অন্যান্য আদিবাসী বা জাতিগোষ্ঠীর হারের তুলনায় যা সবচেয়ে বেশি।

ইতিহাসবিদ ও সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খাদ্য সহায়তা তহবিল বন্ধ শুধু পরিস্থিতি উদ্ভুত সমস্যা নয়। বরং অ্যামেরিকায় শত শত বছর ধরে চলমান বর্ণ বৈষম্যের উদাহরণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অ্যামেরিকায় বর্ণ বৈষম্যের প্রত্যক্ষ কোনো আইন নেই। কিন্তু দীর্ঘকালীন নৃশংসতা, দাসত্বের পর অনায্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তাদেরকে দমিয়ে রাখছে।’

গত বছর ন্যাশনাল আরবান লীগের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানরা শ্বেতাঙ্গ অ্যামেরিকানদের আয়ের গড়ে মাত্র ৬৪ শতাংশ আয় করতে পারে। বর্ণভেদে আয়ের এ বিস্তর ফারাক গত ২০ বছর ধরে চলমান।

সিভিল রাইটসের প্রেসিডেন্ট মার্ক মরিয়াল বলেন, অ্যামেরিকায় কর্মক্ষেত্রে সুযোগের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের এখনো অনেক বৈষম্য দেখা যায়। আফ্রিকান অ্যামেরিকানদের মধ্যে যখন দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে তখন আমাদের জনগোষ্ঠীর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা ব্যাপক হারে দরিদ্রই থেকে গেছেন।

চলতি বছর কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

ম্যাককিনজি ইন্সটিটিউট ফর ব্ল্যাক ইকোনমিক মোবিলিটি জানায়, দীর্ঘ সময়ের বৈষম্যের ইতিহাস কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে শ্বেতাঙ্গদের সমপর্যায়ে আসতে কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের আরও ৩০০ বছর লাগবে। উপরন্ত সেটিও নির্ভর করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বন্দোবস্তের ওপর।

এমন সময় শাটডাউনে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের জীবন আরো কঠিন এবং অবনতির দিকে ঠেলে দিবে।

এনডিটিভির প্রতিবেদন জানায়, অ্যামেরিকার সরকার কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের যেকোনো পরিস্থিতে খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা দিতে আইনত দায়বদ্ধ। কৃষ্ণাঙ্গ স্বদেশীদের জমি ও সম্পদ ব্যবহারের বিনিময়ে আইনত এ চুক্তি হয়।

তবে বিভিন্ন সময় শাটডাউন ও তহবিলের অভাব হলে সর্বপ্রথমেই কৃষ্ণাঙ্গ স্বদেশীদের প্রতি এ চুক্তি ভঙ্গ করতে দেখা গেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার