ছোট নৌকায় ফেরত আসা ইরানি আশ্রয়প্রার্থীকে ফের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ
দ্য গার্ডিয়ান
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ এএম
ফ্রান্স থেকে পাচারকারীদের হাত থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় ফেরত আসা এক ইরানি আশ্রয়প্রার্থীকে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ থেকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে হোম অফিস। মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবীরা বলছেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এ ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হলে তার জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হবে।
ওই ব্যক্তি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের উদ্বেগে কর্তৃপক্ষ তার ওপর প্রতি ঘণ্টায় নজরদারি চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, ফ্রান্সে পাচারচক্রের হাতে তিনি আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়েছিলেন এবং সেখানে ফিরে যাওয়া তার জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
তিনি বলেছেন, “যদি ফ্রান্স আমার জন্য নিরাপদ হতো, আমি কখনো যুক্তরাজ্যে আসতাম না। যুক্তরাজ্য এখন দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু আমি অন্য কোনো নিরাপদ দেশে আশ্রয় চাই—যেমন কানাডা। আমি মানুষ, আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে যদি আমাকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়।”
এই ইরানি নাগরিক প্রথমবার ৬ আগস্ট যুক্তরাজ্যে পৌঁছান এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়। পরে ১৮ অক্টোবর তিনি আবার ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে আশ্রয় আবেদন করেন। পাচারের ইঙ্গিত থাকলেও হোম অফিস ২১ অক্টোবর ফ্রান্সে তার পুনঃগ্রহণের অনুরোধ পাঠায়, যা ২৪ অক্টোবর গৃহীত হয়।
তার মানব পাচারের অভিযোগ “ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজমে” পাঠানো হলেও ২৭ অক্টোবর তা খারিজ করে দেওয়া হয়। তার আইনজীবীরা বলেছেন, “তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে, তিনি জরুরি চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রয়োজন।” কিন্তু নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহে অতিরিক্ত সময় চাওয়ার আবেদন হোম অফিস প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে রুল ৩৫ অনুযায়ী (যা অভিবাসী বন্দিদের দুর্বলতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়) তার মূল্যায়নের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ৬ নভেম্বর—যা তার নির্ধারিত ফেরত পাঠানোর তারিখের পরদিন।
দলিল অনুযায়ী, হোম অফিস স্বীকার করেছে ফ্রান্সে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সম্ভব হলেও “ক্ষমতা ও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে তা কার্যকর নয়।” একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যা প্রতিরোধে “যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে” বলেও উল্লেখ করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানস ফর রাইটস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাডি হ্যারিস বলেন, “আমরা ওই ব্যক্তির কল্যাণ নিয়ে মারাত্মক উদ্বিগ্ন। চলমান আটক ও ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বাতিল করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে যাদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদেরও নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তায় জীবন কাটাতে হচ্ছে। অনেকে আগের নির্যাতনের দেশগুলোতে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কে ভুগছেন।”
গত বছর যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় প্রবেশ করেছিলেন ৩৬,৮১৬ জন। চলতি বছর ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬,৮৮৬—গত বছরের তুলনায় ৭০ জন বেশি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে টানা ১১ দিন কোনো পারাপার হয়নি।
এ ঘটনায় মন্তব্যের জন্য হোম অফিস ও ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান