Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশি-ভারতীয়দের ভিসা আবেদন ‘গণহারে বাতিলের’ উদ্যোগ কানাডার

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

বাংলাদেশি-ভারতীয়দের ভিসা আবেদন ‘গণহারে বাতিলের’ উদ্যোগ কানাডার
বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের ভিসা আবেদন ‘গণহারে বাতিলের’ ক্ষমতা চেয়েছে কানাডার কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকার। আর এর পেছনে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জালিয়াতির প্রবণতাই অন্যতম কারণ বলে উঠে এসেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ সরকারি নথিতে। কানাডার জাতীয় গণমাধ্যম সিবিসি নিউজের হাতে আসা ওই নথিতে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত নথি অনুসারে, কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজি ও সিটিজেনশিপ কানাডা (আইআরসিসি), কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) ও নাম প্রকাশ না করা কিছু মার্কিন সংস্থা মিলে এমন ভিসা আবেদন শনাক্ত ও বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যেগুলো জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
এই লক্ষ্যেই একটি যৌথ কর্মদল গঠন করা হয়েছে, যা ভিসা প্রত্যাখ্যান ও বাতিলের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে চায়। ওই উপস্থাপনায় ভারত ও বাংলাদেশকে ‘দেশভিত্তিক সমস্যা’ হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যদিও প্রকাশ্যে কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী লেনা ডিয়াব জানিয়েছেন, মহামারি বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এই ক্ষমতা চাইছে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

নথিগুলো থেকে বোঝা যায়, সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে আসল প্রেরণা কী, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

এই গণভিসা বাতিলের বিধানটি পার্লামেন্টে আনা হয় বিল সি-২ এর অংশ হিসেবে, যা মূলত সরকারের সীমান্তসংক্রান্ত একটি বড় সংস্কার আইন। পরবর্তী সময়ে বিলটি ভেঙে দুটি অংশে ভাগ করা হয় ও গণ হারে ভিসা বাতিলের বিধানটি স্থান পায় বিল সি-১২-এ, যা সরকার দ্রুত পাস করাতে চায়।

তবে ৩০০-রও বেশি নাগরিক সংগঠন এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে উদ্বেগ জানিয়েছে। মাইগ্র্যান্ট রাইটস নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি সংগঠন বলছে, এই আইন পাস হলে সরকার একটি গণনির্বাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। তবে অভিবাসন আইনের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সরকার হয়তো এই ক্ষমতা ব্যবহার করে ভিসা আবেদনপত্রের জট বা দীর্ঘ অপেক্ষার সারি দ্রুত কমাতে চায়।

অভ্যন্তরীণ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের মে মাসে যেখানে ভারতীয় নাগরিকদের আশ্রয় দাবি ছিল মাসে ৫০০-এরও কম, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজারে।

ভারতীয় আবেদন যাচাই প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় অস্থায়ী বাসিন্দা ভিসার (টিআরভি) আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময়ও অনেক বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষে যেখানে গড় সময় ছিল ৩০ দিন, এক বছর পর তা দাঁড়ায় ৫৪ দিনে।

একই সঙ্গে ভিসা অনুমোদনের হারও কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যেখানে অনুমোদিত ভিসার সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার, জুন নাগাদ তা নেমে আসে ৪৮ হাজারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতে বিমানযাত্রার আগে যাত্রীদের ওঠার অনুমতি না পাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৮৭৩ জন আবেদনকারীকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনাক্ত করা হয় এবং তাদের কাছে আইনি অধিকার ও প্রতিকার সংক্রান্ত নোটিশ পাঠানো হয়।
তবে গত মাসে সিবিসি নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইআরসি জানিয়েছে, নতুন এই ক্ষমতা কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আনা হচ্ছে না এবং কোনো সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হবে না।

২০২৪ সালের অক্টোবরের একটি পৃথক নথিতে তৎকালীন অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলারকে পরামর্শ দেওয়া হয়, তিনি যেন ব্যক্তিগতভাবে কোনো দেশ উল্লেখ না করে ভিসা বাতিলের বাড়তি ক্ষমতা অর্জনের জন্য উদ্যোগ নেন। সেখানে বলা হয়, অস্থায়ী ভিসা বাতিলের ক্ষমতা নিরাপত্তা ঝুঁকি কমায় ও এই ধরনের নথির অপব্যবহার সীমিত করে।

তবে নথিতে এটিও উল্লেখ করা হয় যে, এসব সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষয়টি নির্ভর করবে ‘প্রক্রিয়াগত ন্যায্যতা’ বজায় রাখা হয়েছে কি না তার ওপর।

সিবিসি নিউজ কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক দপ্তর ও মন্ত্রী লেনা ডিয়াবের কার্যালয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন পাঠায়। এর জবাবে অভিবাসন বিভাগ জানায়, তারা অপ্রয়োজনীয় সীমান্ত চাপ কমাতে, তথ্য বিনিময় বাড়াতে ও ভুয়া ভিসাধারী এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।

কানাডিয়ান অভিবাসন বিভাগের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলেই ২০২৪ সালের জুন থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় প্রবেশকারী বিদেশিদের সংখ্যা ৯৭ শতাংশ কমেছে।

একই সঙ্গে ‘অস্থায়ী বাসিন্দা’ ভিসাধারীদের আশ্রয় দাবিও ৭১ শতাংশ কমেছে ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত জালিয়াতির অভিযোগে ভিসা প্রত্যাখ্যান বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

তবে কেন ভারত ও বাংলাদেশকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, কিংবা দেশভিত্তিক গণ হারে ভিসা বাতিলের প্রসঙ্গ জনসমক্ষে আনা হয়নি, এই প্রশ্নের উত্তর তারা সরাসরি দেয়নি।

আইআরসিসি এও জানায়, কোন পরিস্থিতিতে এই গণভিসা বাতিল ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে তা গভর্নর ইন কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে ও তা কানাডা গ্যাজেটে প্রকাশ করা হবে। সেখানে জানানো হবে কেন সিদ্ধান্তটি জনস্বার্থে নেওয়া হয়েছে, কারা এর আওতায় পড়বে, কীভাবে তারা প্রভাবিত হবে ও কী ধরনের ব্যতিক্রম বা ফেরত প্রক্রিয়া থাকবে।

সূত্র: সিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার