Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সাদিক খান ও জোহরান মামদানি : লন্ডন ও নিউইয়র্কের দুই মুখ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৯ এএম

সাদিক খান ও জোহরান মামদানি : লন্ডন ও নিউইয়র্কের দুই মুখ

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ও নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র জোহরান মামদানি—দুজনই মুসলিম, উদারপন্থী ও অভিবাসী পরিবারের সন্তান। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পথচলা ও বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। একদিকে খান যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রমুখী রাজনীতিক, অন্যদিকে মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল বাম রাজনীতির নবীন মুখ, যিনি বার্নি স্যান্ডার্সের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের আদর্শে অনুপ্রাণিত।

সাদিক খান জন্মেছেন লন্ডনের এক শ্রমজীবী পাকিস্তানি পরিবারে। বাসচালকের পুত্র, সাত ভাইবোনের সঙ্গে পাবলিক হাউজিংয়ে বেড়ে ওঠা সেই শিশু পরে তিন মেয়াদে লন্ডনের মেয়র হয়ে উঠেছেন। তার রাজনীতির মূল ভিত্তি—সাশ্রয়ী আবাসন, গণপরিবহন ও পরিবেশবান্ধব নগরনীতি।

অন্যদিকে ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি জন্মেছেন উগান্ডায়, শৈশবে অভিবাসী হয়ে এসেছেন নিউইয়র্কে। তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। পরিবার শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত, আর্থিকভাবে তুলনামূলক সচ্ছল। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই মামদানি নির্মাণ করেছেন তার সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি—নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে তার মূল প্রতিশ্রুতি ‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’, অর্থাৎ সবার নাগালে থাকা জীবনযাপন।

দুই নেতা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী রাজনীতির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একদিকে সাদিক খানকে বলেছেন ‘stone cold loser’, অন্যদিকে মামদানিকে ‘pure communist’। ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন তাদের আখ্যা দিয়েছেন ‘red-green alliance’-এর সদস্য হিসেবে—যেখানে লাল মানে বাম রাজনীতি, আর সবুজ মানে ইসলাম।

এই আক্রমণ কেবল রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করেছে—দুজনকেই বাড়াতে হয়েছে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা।

গাজা যুদ্ধের প্রশ্নে দুজনের অবস্থানও আলাদা বাস্তবতার প্রতিফলন। লন্ডনে জনমতের চাপে সাদিক খান প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলের অভিযানকে বলেছেন ‘genocide’।

নিউইয়র্কে মামদানির অবস্থান আরও সূক্ষ্ম—তিনি শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিলেও ইসরায়েলি দিক থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। রিপাবলিকান নেতারা তাকে ‘জিহাদিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, যা মামদানির প্রচার টিম ‘বর্ণবাদী ও ইসলামভীতিপূর্ণ’ বলে নিন্দা করেছে।

লন্ডনের ১৫ শতাংশ জনগণ মুসলিম, নিউইয়র্কে মুসলিম জনসংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ, আর ইহুদি জনগোষ্ঠী সেখানে দ্বিগুণেরও বেশি। তাই দুই শহরের ভোট-রাজনীতির বাস্তবতাও ভিন্ন।

খান লন্ডনে মুসলিম পরিচয়কে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেছেন—ঈদ উদযাপনে অংশ নেন, কিন্তু মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন খ্রিষ্টান ক্যাথেড্রালে। তিনি LGBTQ অধিকার ও সমলিঙ্গ বিবাহের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

অন্যদিকে মামদানি তরুণ ভোটার, প্রগতিশীল নারী ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের এক যৌথ প্ল্যাটফর্ম গড়েছেন—যা নিউইয়র্কের বাম রাজনীতিকে নতুন প্রাণ দিয়েছেন।

সাদিক খানকে ডানপন্থী দল ‘লন্ডনের অপরাধ বৃদ্ধির’ জন্য দায়ী করেছে, কিন্তু তিনি তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন—সহিংস অপরাধ বরং কমেছে।

মামদানিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু ক্যুমো পর্যন্ত পরোক্ষভাবে সন্দেহ করেছেন। তবু মামদানি থেমে যাননি; তার ভাষায়, ‘ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র এক রাজনৈতিক অন্ধকারে ঢুকে পড়েছিল, এখন সেই অন্ধকার থেকে বেরোনোর সময়।’

যদি মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হন, তবে বিশ্বের দুই বৃহত্তম নগর—লন্ডন ও নিউইয়র্ক—নেতৃত্ব দেবে মুসলিম, উদারপন্থী দুই রাজনীতিক। ভিন্ন অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তারা একই প্রতীক—বহুসাংস্কৃতিক নগর জীবনের সম্ভাবনা ও ডানপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিরোধের মুখ।

সাদিক খান লন্ডনের অভিজ্ঞতায় জানেন, বৈচিত্র্যই শক্তি। আর জোহরান মামদানি প্রমাণ করছেন, সেই বৈচিত্র্যকে রক্ষা করাই প্রগতিশীল রাজনীতির মূল চ্যালেঞ্জ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার