যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের পর ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্যতম সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ‘প্রিন্স’ উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি রাজকীয় বাসভবন ‘রয়্যাল লজ’ ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের গ্রামীণ সমাজে। তবে রাজপরিবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এখন থেকে তিনি তাঁর ভাই রাজা চার্লসের আর্থিক অনুদানে জীবন চালাবেন। রাজা নিজেই অ্যান্ড্রুর নতুন আবাসনের খরচ বহন করছেন বলে জানা গেছে।
শুধু ভাই অ্যন্ড্রু নয়, রাজপরিবারের আরও অনেক খাতেই রাজাকে অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এত বিপুল রাজকীয় ব্যয় রাজা কীভাবে সামাল দেন, কোন উৎস থেকে তিনি টাকা পান, সাধারণ মানুষের কাছে তা চরম কৌতূহলের বিষয়।
এই বিষয়ে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকেই কোটি কোটি পাউন্ড পায় ব্রিটিশ রাজপরিবার। ‘সোভেরেইন গ্রান্ট’ নামে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এটি রাজা চার্লসের একমাত্র আয় নয়।
‘সোভেরেইন গ্রান্ট’ থেকে কত আসে?
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ‘সোভেরেইন গ্রান্ট’ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ২১ লাখ পাউন্ডে (প্রায় ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা), যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই অনুদান ছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ। এর মধ্যে ৫ কোটি ১৮ লাখ পাউন্ড ছিল মূল রাজকীয় ব্যয়ের জন্য এবং ৩ কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ড ব্যয় করা হয় বাকিংহাম প্যালেস আধুনিকায়ন প্রকল্পে।
২০১২ সালে এই বরাদ্দ যখন চালু হয়েছিল, তখন এটির পরিমাণ ছিল বছরে মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড।
আছে ‘ক্রাউন এস্টেট’ আয়
এই অনুদান নির্ধারিত হয় ‘ক্রাউন এস্টেট’ এর মুনাফার ওপর ভিত্তি করে। এই সম্পত্তি রাজার মালিকানাধীন হলেও তা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয় এবং আয় সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এরপর সেই মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ রাজপরিবারকে দেওয়া হয়।
২০২৩-২৪ সালে ক্রাউন এস্টেটের সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড, যার মধ্যে রয়েছে লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিটসহ বিপুল সম্পত্তি ও উপকূলবর্তী ভূমি। তবে এই সম্পত্তি রাজা ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি বা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন না।
এই খাতের আয় থেকে ২০১৭ সালে রাজপরিবারের জন্য বরাদ্দের হার বাড়িয়ে মুনাফার ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। তবে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছিল মূলত বাকিংহাম প্যালেস সংস্কারের জন্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে তা কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়। তবু অফশোর উইন্ডফার্মের মুনাফা বৃদ্ধির কারণে এই বছর এই রাজা চার্লস প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড বেশি পেয়েছেন।
রাজপরিবারের অন্য আয়
রাজা চার্লস ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার নামের একটি ব্যক্তিগত এস্টেট থেকেও আয় করেন, যা ১৮ হাজার হেক্টর জমি ও বিভিন্ন সম্পত্তি নিয়ে গঠিত। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই সম্পদের মূল্য ছিল ৬৭৯ মিলিয়ন পাউন্ড এবং বার্ষিক মুনাফা প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ পাউন্ড।
অন্যদিকে, রাজার পুত্র প্রিন্স উইলিয়াম পান ডাচি অব কর্নওয়াল থেকে আয়। ওই সম্পদের মূল্য ১.১ বিলিয়ন পাউন্ড এবং বার্ষিক মুনাফা প্রায় ২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড।
এই দুটি সম্পত্তির আয় রাজা ও প্রিন্স উইলিয়াম ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তবে এস্টেটের সম্পদ বিক্রি করলে, সেই অর্থ নিজেদের কাছে রাখতে পারেন না।
চার্লসের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ‘বালমোরাল’ ও ‘স্যান্ড্রিংহাম’ এস্টেট। ধারণা করা হচ্ছে, ছোট ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে নরফোকের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটেই থাকতে দেবেন রাজা চার্লস।
কর দেয় রাজপরিবার
১৯৯২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজের আয় থেকে কর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজা চার্লসও তা অনুসরণ করছেন। তবে তাঁরা কত কর দেন তা প্রকাশ করা হয় না। এ ছাড়া রাজপরিবারের জন্য বরাদ্দ ‘সোভেরেইন গ্রান্ট’ এই করের আওতায় পড়ে না।
এদিকে ‘রিপাবলিক’ নামে একটি গণতান্ত্রিক সংস্থা দাবি করেছে, নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যয়সহ রাজতন্ত্র বজায় রাখতে যুক্তরাজ্যের জনগণের বছরে প্রায় ৫১ কোটি পাউন্ড খরচ হয়।