Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

চার স্ত্রী ও ১৪৪ সন্তানসন্ততি নিয়ে যেভাবে কাটছে সুখের জীবন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

চার স্ত্রী ও ১৪৪ সন্তানসন্ততি নিয়ে যেভাবে কাটছে সুখের জীবন

এক ছাদের নীচে চারজন স্ত্রী ও ১৪৪ জন সন্তানসন্ততি নিয়ে জমে উঠে গল্প আড্ডা। ৭৮ বছর বয়সী সাঈদ মুসবাহ আল কেতবির জীবনটা কাটছে হাসি আনন্দে। বৃহৎ পরিবার হলেও তাদের সংসারে নেই কোনো অশান্তি। হাসিখুশি ভাবেই কাটছে তাদের সুখের জীবন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র ইমরাত আল-ইউমের বরাতে গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে বৃহৎ এই পরিবারের গল্প তুলে এনেছে গালফ নিউজ।

গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাঈদ মুসবাহ আল কেতবির শারজাহর (আরব আমিরাতের শহর) বাসায় প্রতিদিন আড্ডা জমে। এক ছাদের নীচে আড্ডায় শরিক হন সকলেই। কফির কাপে চুমুকে জমে উঠে গল্প। বাড়ির প্রতিটি কোনায় কোনায় আমিরাতি ঐতিহ্যের স্মারক। গল্পে স্থান পায় পূর্বপুরুষদের ঐতিহাসিক নানান ঘটনা।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি বলেন, সন্তানদেরকে সামাজিক নীতি ও মূল্যবোধ শিখিয়েছি। তারা এখন আবার তাদের সন্তানদের শেখাচ্ছে। এটাই আমাদের সংবিধান—‘আমিরাতি আল সানা’।

আমিরাতি আল সানা হলো—আমিরাতি মূল্যবোধের প্রতীক। যা বড়দের প্রতি সম্মান, উদারতা, নম্রতা, সততা, সহনশীলতা এবং পরিবার, সম্প্রদায় ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা শেখায়।

পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রসঙ্গে সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি বলেন, আমার চারজন স্ত্রী। এক ছাদের নীচেই তারা মিলেমিশে থাকে। কঠোরতা দিয়ে নয়, ন্যায়বিচারই শান্তি আনে। স্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ জায়গায় থাকে। তাদের সুন্দর পরিচালনা ঘরের শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি এক সময় কর্মরত ছিলেন সামরিক বাহিনীতে। সাবেক এই সেনা বলেন, কর্মক্ষেত্র থেকে তিনি নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্যের শিক্ষা পেয়েছেন। যা পরবর্তী সংসার জীবনে কাজে লেগেছে।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবির বাসা যেন একটি গ্রামের মতো। সংসারে তার ১২ জন ছেলে এবং ১৩ জন মেয়ে। আর নাতি-নাতনির সংখ্যা একশ জনের বেশি। পুরো আরব আমিরাত জুড়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তবে প্রতি সপ্তাহে ছুটে আসে বাড়িতে। যেখানে জমে গল্প-আড্ডা। শুক্রবার হাজির হন পরিবারের নারী সদস্যরা। আর বাকি দিনগুলোতে আসেন পুরুষ সদস্যরা। সবাই মনোযোগী শ্রোতা হয়ে উপভোগ করে। প্রযুক্তির এই যুগে এসেও ঐতিহ্যের ধারা বজায় রেখে চলছে পরিবারটি।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি বলেন, আমি আমার ছেলে সন্তানদের আন্তরিকতা শিখিয়েছি এবং মেয়েদের শিখিয়েছি ঘর পরিচালনা। তারা যখন ছোট ছিল তাদেরকে ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতা শেখানোর জন্য মরুভূমিতে নিয়ে যেতাম। এখন আবার তারা তাদের সন্তানদের শেখাচ্ছে।

সন্তানদের সফলতায় বেশ উচ্ছ্বসিত ৭৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, আমার মেয়ে সালমা একজন আইনজীবী। ছেলেরা কেউ পুলিশ, আর্মি, শিক্ষা এবং সরকারি নানা জায়গায় রয়েছে।

পারিবারিক জীবনের বাইরে সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি একজন গল্পকার ও গবেষক। তিনি আমিরাত ও মরুভূমির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেন। অতীত ও বর্তমানের মাঝে একজন সেতুবন্ধনকারী হিসেবে তাকে সম্মান করে মানুষ।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি তার অবদানের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে শারজাহর শাসক শেখ ড. সুলতান বিন মোহাম্মদ আল কাসিমি শারজাহ আন্তর্জাতিক বর্ণনাকারী ফোরামের ‘ভ্রমণকারীদের গল্প’ অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেন।

ব্যক্তি জীবনে ধর্মপরায়ণ সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি। তিনি ৪১ বার হজ এবং ১২৯ বার ওমরাহ পালন করেছেন।

সাঈদ মুসবাহ আল কেতবির বড় ছেলে মোহাম্মদ বলেন, আমাদের বড় পরিবার থাকা সত্ত্বেও, আমাদের পিতা কখনও আমাদের ছেড়ে যাননি। তিনি আমাদের ঐক্য, সম্মান ও ভালোবাসা শিখিয়েছেন।

বাড়ির ভেতরে ঐক্যই একটি নিয়ম। পরিবারের মিলিত ভোজ হয় এবং কোনো বিরোধ হলে তা খোলাখুলি সমাধান করা হয় যাতে সবাই শিখতে পারে।

নাতি-নাতনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাঈদ মুসবাহ আল কেতবি বলেন, এটাই আমাদের উত্তরাধিকার এবং আমার মৃত্যুর অনেকদিন পর পর্যন্তও এটি বেঁচে থাকবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার