দুইবার পরকিয়ায় জড়িয়েছিলেন ‘লৌহ মানবী’ মার্গারেট থ্যাচার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
'লৌহ মানবী' হিসেবে পরিচিত ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের জীবনের এক অজানা অধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। নতুন প্রকাশিত এক বইয়ে লেখক দাবি করেছেন, বিবাহিত অবস্থায় দুইবার পরকিয়া সম্পর্কে জড়ান এই জাঁদরেল রাজনীতিক।
গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এই তথ্য জানিয়েছে।
১৯৫১ সালে ডেনিস থ্যাচারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মার্গারেট রবার্টস। ২০০৩ সালে ডেনিসের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট ছিল। অন্তত এতদিন সবাই তাই ভেবেছিলেন।
তাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে কোনো কেলেঙ্কারির তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে 'দ্য ইনসিডেন্টাল ফেমিনিস্ট' নামের নতুন বইটিতে লেখক টিনা গডওয়েন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা 'লৌহ মানবী'র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন।
মার্গারেটের শততম জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।
বইতে লেখক দাবি করেন, মার্গারেট অন্তত দুইটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান। প্রথমটি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আর অপরটি এক সতীর্থ রাজনীতিকের সঙ্গে।
লেখক ঔপন্যাসিক ও কনজারভেটিভ দলের মন্ত্রী জনাথন এইটকেনসহ একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে আরও দাবি করা হয়, পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
পরবর্তী জীবনে স্পেলথর্নের এমপি স্যার হামফ্রে অ্যাটকিনসের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান তিনি।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হামফ্রে অ্যাটকিনস নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
স্যার হামফ্রের সঙ্গে মার্গারেট থ্যাচারের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জনাথন এইটকেন বলেন, 'সে সময় বেশকিছু বিশ্বাসযোগ্য গুজব চালু ছিল। সম্ভবত তার সুদর্শন চেহারাই মার্গারেটকে আকৃষ্ট করেছিল।'
'তবে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বেশ হতাশাজনক ছিল,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপর এক রাজনীতিবিদ লেখককে জানান, অন্যান্য সমসাময়িক নেতার তুলনায় যোগ্যতা কম হলেও একের পর এক পদোন্নতি পেতে থাকেন অ্যাটকিন, যা গুজবের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছিল।
অন্যান্য সূত্রগুলো টিনা গডওয়েনকে জানান, মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তার প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা লর্ড বেলের 'বিশেষ বন্ধুত্ব' ছিল।
নৈশভোজের সময় মার্গারেটের হাঁটুতে হাত রেখে বসতেন লর্ড বেল। বিষয়টি 'মার্গারেট খুবই পছন্দ করতেন,' দাবি সেই সূত্রের।
মার্গারেট থ্যাচারের আনুষ্ঠানিক ও অনুমোদিত জীবনীর লেখক লর্ড মুর জানান, তিনি অ্যাটকিনসনে নিয়ে গুজবটি শুনেছেন, কিন্তু এর স্বপক্ষে কখনোই কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ হাতে পাননি তিনি।
তিনি লর্ড বেলের ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করেন।
ইতোমধ্যে স্যার হামফ্রে ডেভিসের পরিবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
ছেলে চার্লস হামফ্রে বলেন, 'বাবা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াননি। বিষয়টি একদম স্পষ্ট।'
১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মার্গারেট থ্যাচার।
ব্রিটেনের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য তিনি 'লৌহ মানবী' হওয়ার খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণ ও সরকারি খরচ কমানোর উদ্যোগ নেন।
তার এসব উদ্যোগকে সমষ্টিগতভাবে 'থ্যাচারিজম' বা 'থ্যাচারবাদ' বলা হয়।
২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান মার্গারেট থ্যাচার।