ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন জব্দ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫ পিএম

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে এক বিরাট ক্রিপ্টোকারেন্সি কেলেঙ্কারি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বিটকয়েন জব্দ করেছে। একই সঙ্গে কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ী চেন ঝি–এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এই প্রতারণা নেটওয়ার্কের মূল হোতা হিসেবে।
চেন ঝি কম্বোডিয়াভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রিন্স গ্রুপ–এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে মার্কিন প্রসিকিউটররা তাঁর বিরুদ্ধে ‘ওয়্যার ফ্রড ষড়যন্ত্র’ ও ‘মানি লন্ডারিং’-এর অভিযোগ আনেন। মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, চেন ঝি তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি বিশাল সাইবার প্রতারণা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, যা অনলাইনে বিশ্বজুড়ে মানুষকে বিনিয়োগের নামে প্রতারিত করত।
আদালতের নথি অনুসারে, প্রিন্স গ্রুপ কম্বোডিয়ায় অন্তত ১০টি স্ক্যাম সেন্টার পরিচালনা করত। এসব কেন্দ্রে হাজার হাজার ভুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণা চালানো হতো। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এসব কেন্দ্রে মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের ঘটনাও ঘটত।
মার্কিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন আইজেনবার্গ বলেন, ‘প্রিন্স গ্রুপ একটি অপরাধী নেটওয়ার্ক, যা মানবিক কষ্টের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে। তারা মানুষকে বন্দী করে প্রতারণায় বাধ্য করেছে।’
বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চেন ঝি ও তার সহযোগীরা অবৈধ আয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। তারা দামি ঘড়ি, ব্যক্তিগত জেট, শিল্পকর্ম ও পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম পর্যন্ত কিনেছিলেন। দোষী প্রমাণিত হলে চেন ঝির ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
অভিযানে যুক্তরাজ্যও অংশ নিয়েছে। দেশটি চেন ঝি ও তার সহযোগীদের লন্ডনের ১৯টি সম্পত্তি জব্দ করেছে, যার একটি ভবনের মূল্য প্রায় ১৩৩ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্য প্রিন্স গ্রুপকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যে বলা হয়, প্রিন্স গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাসিনো ও প্রতারণা কেন্দ্র পরিচালনা করত, যা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই কারণে চারটি প্রতিষ্ঠান—প্রিন্স গ্রুপ, জিন বেই গ্রুপ, গোল্ডেন ফর্চুন রিসোর্টস ও বাইএক্স এক্সচেঞ্জ—নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক বিদেশি নাগরিককে বন্দী রেখে জোরপূর্বক প্রতারণা করানো হতো।
মার্কিন কর্মকর্তারা এই ঘটনাকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক অভিযান ও বিটকয়েন জব্দের বৃহত্তম ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন।