Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স

বিশ্বের শীর্ষ ১০ পাসপোর্টের তালিকায় নেই যুক্তরাষ্ট্র

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০০ এএম

বিশ্বের শীর্ষ ১০ পাসপোর্টের তালিকায় নেই যুক্তরাষ্ট্র

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স চালু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শীর্ষ ১০ পাসপোর্টের তালিকায় নেই যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালে শীর্ষে থাকা আমেরিকান পাসপোর্ট এখন নেমে এসেছে ১২তম স্থানে। একই স্থানে রয়েছে এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার পাসপোর্টও।

বর্তমানে আমেরিকান পাসপোর্টধারীরা ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে মাত্র ১৮০টিতে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।

অন্যদিকে, শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে এশিয়ার শীর্ষ তিন দেশ সিঙ্গাপুর (১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ), দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০) এবং জাপান (১৮৯) স্থান করে নিয়েছে।

এই সূচকটি আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। সংস্থাটি কতগুলো দেশে তারা ভিসা ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দেয় তার ভিত্তিতে এই প্রতিটি দেশের পাসপোর্টের র‌্যাংকিং করে থাকে।

পতনের কারণ

মার্কিন পাসপোর্টের এই পতন, বিশেষ করে ১০ম স্থান থেকে ১২তম স্থানে নামার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রবেশাধিকার পরিবর্তনের একাধিক ঘটনার বিষয়টি বলা হয়েছে। ব্রাজিলের সঙ্গে ভিসামুক্ত চুক্তি বাতিল এবং চীনের দ্রুত সম্প্রসারিত ভিসামুক্ত তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেওয়া পতনের মূল কারণ বলে দাবি করা হয়েছে।

এরপর পাপুয়া নিউগিনি ও মায়ানমারের নীতিগত পরিবর্তনের কারণে মার্কিন পাসপোর্টের মান আরও কমে গেছে। সর্বশেষে সোমালিয়ার নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু করা এবং ভিয়েতনামের নতুন ভিসামুক্ত দেশগুলোর তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেওয়া ছিল শেষ আঘাত। এর ফলেই আমেরিকান পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে বেরিয়ে গেছে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের চেয়ারম্যান ও হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের প্রতিষ্ঠাতা ড. ক্রিশ্চিয়ান এইচ কেলিন বলেন, ‘ছোট ছোট এই পরিবর্তনগুলোর প্রভাব আসলে অনেক বড় যা প্রমাণ করে বৈশ্বিক গতিশীলতার মানচিত্র কতটা সূক্ষ্মভাবে ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত এক দশকে মার্কিন পাসপোর্টের দুর্বলতা শুধু র‌্যাঙ্কিংয়ের পরিবর্তন নয়; এটি বিশ্বব্যাপী চলাচলের স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সফট পাওয়ারের মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যে দেশগুলো বেশি লিবারেল ও সহযোগি মনোভাবাপন্ন তাদের পাসপোর্টের মান আরও বাড়ছে। আর যারা পুরোনো সুবিধার ওপর নির্ভর করছে তারা পিছিয়ে পড়ছে।’

এছাড়াও, যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টও তার ইতিহাসের সবচেয়ে নিচের অবস্থানে নেমে এসেছে। জুলাই থেকে দুই ধাপ নিচে নেমে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম স্থানে এসেছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট এক নম্বরে ছিল।

বর্তমানে আমেরিকানরা ১৮০টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র নিজে মাত্র ৪৬টি দেশকে ভিসামুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর ফলে হেনলি ওপেননেস ইনডেক্সে (যা ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে উন্মুক্ততার ভিত্তিতে র‌্যাঙ্ক করে) যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৭৭তম।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট অ্যানি ফোরশেইমার বলেন, ‘আমেরিকার এই পশ্চাদপসরণ মূলত রাজনৈতিক। দ্বিতীয় ট্রাম্প মেয়াদ শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভেতরের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। সেই একাকীত্বমূলক মানসিকতাই এখন পাসপোর্টের ক্ষমতা হ্রাসে প্রতিফলিত হচ্ছে।’

এই আত্মকেন্দ্রিক নীতির প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১২টি দেশের ওপর ভিসা স্থগিত করেছেন। আরও ৭টি দেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন এবং ৩৬টি দেশে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। এসবের বেশিরভাগই আফ্রিকান দেশ। বর্তমানে ৭টি আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের জন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ভিসা বন্ড দিতে হয় যা দেশ ত্যাগের পরেই ফেরতযোগ্য।

বিপরীতে গত এক দশকে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সে সবচেয়ে দ্রুত উন্নতি করা দেশগুলোর একটি হলো চীন। ২০১৫ সালে ৯৪তম স্থান থেকে উঠে ২০২৫ সালে ৬৪তম স্থানে পৌঁছেছে। ৩৭টি দেশে নতুন করে চীনা পাসপোর্ট দিয়ে ভিসামুক্ত প্রবেশাধীকার বেড়েছে।

অপরদিকে গত এক বছরে নতুন করে ৩০ দেশকে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে চীন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার