শহিদুল আলমসহ আটকৃতদের নেওয়া হয়েছে আশদোদ বন্দরে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২০ পিএম

ইসরাইলের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে শহিদুল আলমসহ গাজাগামী জাহাজবহর থেকে আটক অধিকারকর্মীদের। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় এ তথ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই, আন্তর্জাতিক জলসীমাতে আটকে দেওয়া হয় ফ্লোটিলার ৯টি জাহাজ। সেই সঙ্গে দেড়শো স্বেচ্ছাসেবীদের আটক করে ইসরাইলি নৌবাহিনী। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে দাবি করে তেলআবিব। দ্রুত তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে নিজ দেশে।
এই নৌবহরের 'কনশানস' নামের একটি জাহাজে ছিলেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রি ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। বর্তমানে আটক অবস্থায় অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সঙ্গে ইসরাইলে আছেন তিনি।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) আয়োজিত ৯টি জাহাজের বহরটি দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। একটি বড় জাহাজে প্রায় ১০০ জন এবং বাকি আটটি ছোট নৌযানে আরও ৫০ কর্মী ছিলেন। আয়োজকদের দাবি, অন্তত দুজন ইসরাইলি নাগরিকও এই নৌবহরে ছিলেন।
বুধবার ভোরে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলি নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট শায়েতেত ১৩ এবং অন্যান্য বাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে ৯টি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কনশানস নামের ৬৮ মিটার দীর্ঘ যাত্রীবাহী জাহাজে নামার জন্য কমান্ডোরা হেলিকপ্টার থেকে রশি বেয়ে নামেন।
ফ্লোটিলা সংগঠকরা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, আমাদের জাহাজে ইসরাইলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে এবং আমাদের আটটি নৌযান অবৈধভাবে আটক ও ছিনতাই করা হয়েছে।
এফএফসি জানায়, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে সমুদ্র ডাকাতির শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেয়।
তুরস্ক জানায়, নৌবহরে তুর্কি নাগরিক ও সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। দেশটি বলেছে, গণহত্যাকারী ইসরাইলি সরকার শান্তিপূর্ণ উদ্যোগগুলোকেও আক্রমণ করছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, গত দুই বছরে ইসরাইল হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে।
এর আগের সপ্তাহে গাজামুখী ৪০টিরও বেশি নৌকা আটক করে ইসরাইল, যাতে ৪৫০ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন।
ইসরাইল পূর্বেও গাজাগামী জাহাজে হামলা চালিয়েছে, ত্রাণ সামগ্রী জব্দ করেছে এবং কর্মীদের আটক করে পরে বহিষ্কার করেছে।
প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাসের গাজা উপত্যকায় ১৮ বছর ধরে ইসরাইল অবরোধ বজায় রেখেছে। মার্চ মাসে তারা সীমান্ত বন্ধ করে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দিয়ে অবরোধ আরও কঠোর করে, যার ফলে অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় ৬৭ হাজার ১০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অব্যাহত বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি এখন কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।