Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৫ পিএম

ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের এনফিল্ড শহরের মেয়র মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে এ তথ্য পেয়েছে।

টেলিগ্রাফ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, লেবার পার্টির বহিষ্কৃত সদস্য আরিফুল বাংলাদেশ থেকে তার বন্ধু ও পরিবারের ৪১ জনকে অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাজ্যে আনার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেন।

তিনি তার দপ্তরের অফিসিয়াল এবং ভুয়া চিঠি ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে পাঠান। এসব চিঠিতে তার কাউন্সিলের লোগো ও প্রতীক ব্যবহার করেন তিনি।
চিঠিগুলো ঘেটে টেলিগ্রাফ দেখতে পেয়েছে, তিনি যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের কাছে অনুরোধ করেছেন ‘তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের ভিসা প্রক্রিয়া যেন খুব সহজ’ হয়। কারণ তারা তার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

৪৭ বছর বয়সী আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বর্তমানে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে তদন্ত করছে। এছাড়া তার কাউন্সিলের একটি স্বাধীন তদন্তে দেখা গেছে তিনি তার পদের অপব্যবহার করে ‘পরিবার, বন্ধু ও পরিচিতদের ভিসা পেতে সাহায্য করে’ এবং ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের’ মাধ্যমে কাউন্সিলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।

সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, আরিফুল ইসলামের এ জালিয়াতির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে কীভাবে নির্বাচিত স্থানীয় কাউন্সিল রাজনীতিবিদরা অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করতে পারেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের করা তদন্তের ১৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরিফুল ইসলাম মেয়র হওয়ার এক বছর আগেই এ ধরনের পত্র পাঠিয়েছিলেন। যার কিছু মেয়র হওয়ার আগ মূহুর্তে পাঠান তিনি। তিনি মেয়র হওয়ার আগে ডেপুটি মেয়র ছিলেন।

২০২৪ সালে মে মাসে এনফিল্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ডেপুটি মেয়রের কাছ থেকে ভিসা সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। এরপরই তদন্ত শুরু হয়।

প্রতিবেদনেটি ‘গোপন’ হিসেবে উল্লেখ করে এটি চূড়ান্ত করা হয়। এই প্রতিবেদন ঘেটে দেখা গেছে আরিফুল ইসলাম কিছু চিঠিতে তার বন্ধু ও আত্মীয়দের পাসপোর্ট নাম্বার এবং জন্মতারিখও লিখে দিয়েছেন। যেন তাদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে করা হয়।

কিছু চিঠি পাঠানো হয় মেয়রের অফিস থেকে। এরপর পাঠানো হয় ভুয়া চিঠি। এটি এমনভাবে বানানো হয় যেন মনে হয় চিঠিটি আসল। এই চিঠি কাউন্সিলর নিজে পাঠিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

২০২৪ সালে তার শপথ অনুষ্ঠানে ৪১ জন বাংলাদেশিকে আমন্ত্রণ জানালেও মাত্র একজন বাংলাদেশি ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বলেও তদন্তে পাওয়া গেছে।
আরিফুল ইসলাম তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, তার আগে যারা মেয়র ছিলেন তারাও নিকট আত্মীয়দের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে দপ্তরকে ব্যবহার করেছেন। তাই তিনিও এই কাজ করেছেন।

তদন্তে পাওয়া গেছে, আরিফুলের মেয়রের দপ্তর থেকে ১৩টি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তিনি স্বীকার করেছেন আরও ছয়টি চিঠি প্রস্তুত করে সেগুলো তিনি পাঠিয়েছেন। আরও ১১টি চিঠি নিয়ে সুস্পষ্ট তথ্য না থাকলেও; তদন্তকারীদের বিশ্বাস এ চিঠিগুলোও তিনি পাঠিয়েছেন।

কাউন্সিলের কর্মীরা এসব চিঠি লিখতে ‘ইতস্তত’ করার পর আরিফুল চিঠি ‘জাল’ করে সেগুলো পাঠিয়েছেন।

এসব চিঠিতে বলা হয়েছিল, যাদের ভিসার কথা বলা হয়েছে তাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এসব অতিথিদের খরচ নিজে বহন করা এবং তাদের নিজ বাড়িতে রাখার কথাও বলেছিলেন। চিঠিগুলো আরিফুল নিজে অথবা তার দপ্তরের কর্মীরা স্বাক্ষর করেছিলেন।

তদন্তে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি অতিথিদের শপথ অনুষ্ঠানে আনতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আবেদন করা গ্রহণযোগ্য। তবে আরিফুল ইসলাম সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি তার পদ ও মর্যাদা ব্যবহার করে নিজ পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সুবিধা দিতে চেয়েছেন।

তদন্তকারীরা বলেছেন, কিছু চিঠির তারিখ শপথ অনুষ্ঠানের এক বছর আগের দেওয়া। এতে করে তাদের মধ্যে এসব চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

সাধারণত ভিজিটর ভিসায় যুক্তরাজ্যে ছয় মাস থাকা যায়। এ সময় ভিসাপ্রাপ্তরা তাদের পরিবারের সদস্যের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করতে পারেন।

আরিফুল ইসলাম গত মে মাসে তার মেয়র পদের এক বছর পূর্ণ করেন। জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্ত তিনি তা করেননি।
আরিফুল ইসলাম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি তদন্তকারীদের বলেছেন তার স্বাক্ষর নকল করে ভিসা সুবিধা চাওয়া হচ্ছে এমন বিষয় জানতে পারার পর বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, একটি এজেন্সি তার স্বাক্ষর জাল করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছে।

আরিফুল জানিয়েছেন, বাংলাদেশে জন্ম হলেও ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যে যান। আর জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হয়ে ব্রিটেনের একটি শহরের মেয়র হওয়ার বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য গর্বের বিষয় ছিল। এ কারণে তারা তার শপথ অনুষ্ঠানে আসতে চেয়েছিলেন।

এছাড়া যাদের ভিসার জন্য তিনি সুপারিশ করেছিলেন তাদের কাউকে ভিসা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি। ফলে কেউ ব্রিটেনে আসতে পারেনি।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, তদন্তনাধীন বিষয় নিয়ে তাদের মন্তব্য করা সমীচিন হবে না। তবে অভিবাসন বিষয়ক যে কোনো জালিয়াতি তদন্ত এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ ওঠার পর ২০২৫ সালের জুন মাসে তাকে তার দল লেবার পার্টি সাময়িক বহিষ্কার করে। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এনফিল্ড কাউন্সিলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেয়রের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত হয়েছে সেগুলোকে তারা সমর্থন জানান। এছাড়া তাকে এখন কিছু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোও তাকে মেনে চলতে বলা হয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে নতুন করে আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা, আচরণবিধির প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং পুরোনো মেয়র ব্যাজ পরিধান না করা।

 সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ
এমটিআই

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার