ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দায় ওআইসির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০১:৪১ পিএম

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ না করেই ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। সংস্থাটি এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলকে অবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ডন।
ইস্তাম্বুলে রোববার অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে ওআইসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসনের আমরা দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাই। ইসরাইলি হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি এবং এই বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
বিবৃতিতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না করা হলেও ইসরাইলের ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী নীতিমালা’ এবং ‘ইরান, সিরিয়া ও লেবাননে সাম্প্রতিক হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রোববার সকালে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল আমাদের প্রতি একটি বড় সীমারেখা অতিক্রম করেছে। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেবে—যেকোনো প্রয়োজনীয় উপায়ে।’
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা ও মুসলিম সংহতি জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে।
ইসরাইলকে দায়ী করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাকিস্তানের আহ্বান
ওআইসি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের আজকের বৈঠক শুধু ইরানের প্রতি আমাদের অবিচল সংহতি প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটিই একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, ইসরাইলকে তার বেপরোয়া আগ্রাসনের জন্য অবশ্যই দায়ী করতে হবে। এই আগ্রাসন পুরো অঞ্চলজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।’
ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান জোরালোভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অন্যায় ও অবৈধ আগ্রাসনের নিন্দা জানায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের ভাই ও বোনদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং ইসরাইলের বেসামরিক এলাকায় হামলার ফলে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এখনো ইরানে তাদের পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
‘ইসরাইল আইএইএ’র সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন, আইএইএ সংবিধি এবং একাধিক আইএইএ প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে,’ বলেন ইসহাক ডার।
তিনি বলেন, এই হামলাগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং এটি শুধু এই অঞ্চলের জনগণের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জনগণের নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি তৈরি করেছে।
ইসহাক দার আরও বলেন, জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ইরানের স্বাভাবিক অধিকারকে পাকিস্তান পূর্ণ সমর্থন জানায়।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতির নগ্ন প্রদর্শন ঘটেছে। কোথাও আইনের শাসন, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কিংবা অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার প্রশ্ন ওঠে না। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরাইলের ধারাবাহিক ও বিপজ্জনক সামরিক আগ্রাসনের অংশ।