Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইরান এখন কীভাবে জবাব দেবে?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম

ইরান এখন কীভাবে জবাব দেবে?
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে রোববার সকালে যখন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তিনি শুরুতেই হিব্রু ভাষায় ইরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের বিষয়ে নাটকীয় কোনও বর্ণনা দেশের জনগণের উদ্দেশে দেননি তিনি। বরং এর পরিবর্তে সরাসরি ইংরেজিতে বক্তব্য দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। আর তার এই প্রশংসার নেপথ্য কারণ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা।

নেতানিয়াহুর কণ্ঠে বিজয়ের সুর এবং চাপা হাসি অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ তার রাজনৈতিক জীবনের বড় একটি অংশজুড়েই ছিল ইরানকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরা। গত ১৫ বছর ধরে তার মার্কিন মিত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছেন যে, কেবল সামরিক হামলাই (এবং শুধু মার্কিন অস্ত্র দিয়েই) ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব।

‘ইতিহাস বদলে দেওয়ার’ মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতানিয়াহু নিজেকেও অভিনন্দন জানাতে পারেন। কারণ তিনি এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাব বদলাতে সক্ষম হয়েছেন, যিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তার সমর্থকদের বেশিরভাগই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর পক্ষে ছিলেন না।

তবে ইরান কত দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে কিংবা আদৌ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে ইসরায়েলের মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেয়নি ট্রাম্পের নিজের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গত দশ দিন আগে শুরু হওয়া এই সংঘাতে ইসরায়েলের সরকার ও সেনাবাহিনী বার বার দাবি করেছে, ইরানি হুমকি মোকাবিলার সক্ষমতা তাদের নিজেদেরেই রয়েছে।

আর এটা গোপন কোনও বিষয় ছিল না যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো—বিশেষ করে পাহাড়ের ভেতরে গড়ে তোলা ফোরদোর মতো স্থাপনাগুলোতে প্রবেশ ও ধ্বংস করার মতো শক্তিশালী বোমা কেবল আমেরিকারই আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গত রাতের বোমা হামলায় ইরানের এসব পারমাণবিক স্থাপনা যদি সত্যিই অকার্যকর হয়ে পড়ে, তাহলে নেতানিয়াহু তার যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে ঘোষণা দিতে পারবেন, যা হয়তো এই সংঘাতের ইতি টানার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে ইরানের দাবি, তারা আগেই এসব স্থাপনায় থাকা পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে ফেলেছে।

গত রাতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হামলা না হলে ইসরায়েল তার বহু বছর ধরে প্রস্তুত করা ইরানি নিশানার তালিকা অনুযায়ী হামলা চালিয়ে যেতো। ইরানের সেনাবাহিনী, শীর্ষ কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সরকারি অবকাঠামো এবং বোমা দিয়ে ধ্বংসযোগ্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চলতেই থাকতো।

কিন্তু তাতে হয়তো নেতানিয়াহু এমন কোনো মুহূর্ত পেতেন না, যেখানে তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারতেন—পারমাণবিক হুমকি পুরোপুরি শেষ হয়েছে। হয়তো ইরানে কেবল শাসন পরিবর্তনই তা নিশ্চিত করতে পারতো। বি-২ বোমারু বিমান নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধের গতি বদলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ইরান ও তার মিত্ররা কীভাবে জবাব দেয়।

গত সপ্তাহেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে ইরান মার্কিন স্বার্থের ওপর পাল্টা আঘাত করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকানদের জেনে রাখা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও সামরিক হস্তক্ষেপের জবাবে অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।’’
শনিবার ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী আমেরিকা যুদ্ধে অংশ নিলে তারা লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াতকারী মার্কিন জাহাজে হামলা চালাবে বলে হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বর্তমানে ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সৈন্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকরা সম্ভাব্য হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইরান চাইলেই নানা উপায়ে প্রতিশোধ নিতে পারে, যেমন—মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, উপসাগরীয় ঘাঁটিতে হামলা, এমনকি তেল সরবরাহ ব্যাহত করে বিশ্ববাজারে তেলের দামও বাড়িয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আপাতত তাদের সামরিক অভিযান শেষ এবং তারা তেহরানের সরকারকে উৎখাত করতে চায় না। এতে ইরান হয়তো সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মার্কিন লক্ষ্যে এমনভাবে হামলা করবে, যাতে বড় ধরনের প্রাণহানি না ঘটে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের ব্যবহার করে এই কাজ করতে পারে তেহরান।

২০২০ সালে ট্রাম্প যখন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন, তখনও ইরান এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। শনিবার রাতে ট্রাম্প আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেকোনো হামলার জবাবে ‘চূড়ান্ত শক্তির’ ব্যবহার করবেন তিনি। আজকের সকালে গোটা মধ্যপ্রাচ্য যেন দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা কি এই যুদ্ধের শেষ পর্বের সূচনা, না কি আরও প্রাণঘাতী অধ্যায়ের শুরু?
সূত্র: বিবিসি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার