‘যুক্তরাষ্ট্র কি ইরাকের ভুল এবার ইরানে করছে’—প্রশ্ন চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএন বলেছে—‘যুক্তরাষ্ট্র কি ইরাকের ভুল ইরানে পুনরাবৃত্তি করছে?’
চীনসহ বিভিন্ন দেশ এখন সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছে এবং যুদ্ধ নয়, কূটনীতিকে সামনে আনার ওপর জোর দিচ্ছে। একের পর এক দেশ রোববার কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা একদিকে যেমন ইসরাইল-ইরান যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত আকার দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে যে এটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে অস্থির করে তুলতে পারে। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) বিস্তারিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জাতিসংঘ, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধের অংশ হবে কি না। কিন্তু বাস্তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে রোববার ভোরে ইরানের ওপর হামলা চালায়।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো এই হামলার ফলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পরিষ্কার না হলেও, তেহরান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল—যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় যোগ দিলে তারা পাল্টা জবাব দেবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতিস্বীকার করবে, নাকি উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে মিত্রদের সহযোগিতায় হামলা চালাবে?
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সংঘাতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে—যা সাধারণ মানুষ, অঞ্চল এবং গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই। একমাত্র পথ হচ্ছে কূটনীতি।’
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, ‘সব পক্ষকে আবার আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি।
তবে এটিকে ‘আমি জীবনে মোকাবিলা করা সবচেয়ে গুরুতর সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আর কোনো উত্তেজনা যেন না বাড়ে, সেটি এখন গুরুত্বপূর্ণ।’
চীন
চীনা সরকারি মিডিয়া সিজিটিএনের এক মন্তব্যে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র কি আবার ইরাকের ভুল ইরানে পুনরাবৃত্তি করছে?’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ ইতিহাসে বহুবার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি এনেছে—যেমন দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও আঞ্চলিক অস্থিরতা।’
তারা একমাত্র টেকসই সমাধান হিসেবে কূটনৈতিক উদ্যোগকেই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেয়।
জাপান
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা রোববার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন বলে এনএইচকে জানিয়েছে।
দেশটির জনপ্রিয় দৈনিক ইয়োমিউরি ইরানে হামলার সংবাদে টোকিওতে অতিরিক্ত সংস্করণ বিতরণ শুরু করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার তারা জরুরি বৈঠক ডেকেছে, যাতে হামলার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই তেহরানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। দেশটির এক কর্মকর্তা লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি, ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন এখন শান্তির সময়। আমরা সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়ে যাব।’