Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’, প্রশ্ন তুললেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’, প্রশ্ন তুললেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর বৈধতা নিয়ে কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় দলের আইনপ্রণেতারা গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে ট্রাম্প সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

রোববার (২২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ।

যদিও অনেক রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, তবুও অন্তত দুইজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থি।

ওহাইওর রিপাবলিকান প্রতিনিধি ওয়ারেন ডেভিডসন, যিনি সাধারণত ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত হতে পারে, কিন্তু এটিকে সংবিধানসম্মত বলা কঠিন।’

কেন্টাকির রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি ট্রাম্পের ঘোষণার জবাবে বলেন, ‘এটি সাংবিধানিক নয়।’তিনি এই সপ্তাহে একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন, যেখানে বলা হয়েছে, কংগ্রেস কর্তৃক যুদ্ধ ঘোষণা বা নির্দিষ্ট অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিষিদ্ধ থাকবে।

শনিবার রাতে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প হামলার পক্ষে সাফাই দেন, কিন্তু এর সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে কিছু বলেননি।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এক ভাষণে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকে ‘চরম অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দেন। ওকলাহোমার তুলসা শহরে সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই দেশে যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের রয়েছে। প্রেসিডেন্টের কোনো একক অধিকার নেই।’ তার বক্তব্যের সময় শ্রোতারা ‘আর যুদ্ধ নয়!’ স্লোগানে মুখর হয়।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বলেন, ‘কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্টের ইরানে বোমাবর্ষণ করা স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।’তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সংবিধান ও কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষমতা আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন।

ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি শন কাস্টেন বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্টের এমন কোনো অধিকার নেই যে তিনি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া কোনো দেশে বোমাবর্ষণ করবেন, যদি সেই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাৎক্ষণিক হুমকি না হয়ে থাকে। এটি স্পষ্টভাবে অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।’

তিনি হাউস স্পিকার মাইক জনসনকে আহ্বান জানান, যেন তিনি কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষমতা রক্ষায় নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন

তবে মাইক জনসন ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের ক্ষমতা শ্রদ্ধা করেন এবং এই প্রয়োজনীয়, সীমিত ও লক্ষ্যভিত্তিক হামলাটি অতীতের উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় হয়েছে।’

সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা রিপাবলিকান জন থুন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে সহায়ক হতে পারে।

এছাড়া হাউসের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন না নিয়ে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে এক বিপজ্জনক পথে হেঁটেছেন, যা আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

হাউস ডেমোক্র্যাটদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ক্যাথারিন ক্লার্ক আরও সরাসরি বলেন, ‘যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের। প্রেসিডেন্টের এককভাবে ইরানে হামলা চালানো অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের সেনা ও কূটনৈতিক কর্মীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।’

সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইনের একটি প্রস্তাব সমর্থন করেছেন, যেখানে প্রেসিডেন্টকে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্ট যেন এককভাবে যুদ্ধ শুরু করতে না পারে, এ জন্য আমাদের যুদ্ধক্ষমতা আইন কার্যকর করতে হবে। আমি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেব এবং সব পক্ষের সিনেটরদের একই আহ্বান জানাচ্ছি।’

শনিবার রাতে এমএসএনবিসি-তে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রো খানা, যিনি রিপাবলিকান ম্যাসির সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব তৈরি করেছেন, বলেন, ‘এটি ট্রাম্পের ম্যাগা ঘাঁটির প্রথম বড় ফাটল।’ 

তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধের সমালোচনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, আর আজ তিনি নিজেই সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার