শারীরিক সুস্থতা ছাড়া যাওয়া যাবে না হজে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০২:২২ পিএম

শারীরিক সুস্থতা ছাড়া যাওয়া যাবে না হজে— এমন ঘোষণা দিয়ে ২০২৬ সালে
পবিত্র হজ পালনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। দেশটি বলছে, জটিল রোগে আক্রান্তরা
হজ করতে পারবে না। এ তালিকায় রয়েছে হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতা, লিভার সিরোসিস,
নিউরোলজিক্যাল বা মানসিক সমস্যা, ক্যানসার রোগী এবং ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা নারী।
সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের একটি রোডম্যাপ হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশ (হাব), হজ এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে পাঠিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়
বলছে, আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন
করতে হবে। এরপর ৯ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত
হবে।
সৌদি আরবের বরাত দিয়ে রোডম্যাপে বলা হয়েছে, হজ এজেন্সিগুলোর আগামী বছর
হজে সর্বোচ্চ দুটি সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগ থাকবে। সব ধরণের চুক্তি
এবং অর্থ প্রদান ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হবে। এর বাহিরে
কোনো অর্থ দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। কুরবানির অর্থও এ প্ল্যাটফর্মে জমা দিতে হবে।
এছাড়া হজযাত্রীদের খাবারসংক্রান্ত চুক্তি করতে হবে সৌদি ক্যাটারিং কোম্পানির
সঙ্গে। একইসঙ্গে তাঁবু, সেবা প্যাকেজ এবং পরিবহণ খরচ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আগামী ১০ জুলাই হজ কোটা ঘোষণা করবে সৌদি সরকার। ২৬ জুলাই থেকে ‘নুসুক
মাসার’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্যাম্প সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণ ও অর্থ স্থানান্তর
প্রক্রিয়া শুরু হবে। ৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চলতি হজ মৌসুমের ব্যবহৃত ক্যাম্পগুলো
আগামী হজ মৌসুমের জন্য পুনর্ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
এছাড়া প্যাকেজ, আবাসন, পরিবহণ চুক্তি, এয়ারলাইন্স নির্ধারণসহ ফ্লাইট
সূচি চূড়ান্ত করতে হবে ২৪ আগস্টের মধ্যে। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের তথ্য নুসুক মাসারে আপলোড
এবং গ্রুপ গঠন শুরু করতে হবে। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁবু ভাড়া ও মাশায়ের প্যাকেজ বাবদ
প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠাতে হবে। ৪ জানুয়ারির মধ্যে সেবা সংস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি এবং
ফ্লাইট সূচি নির্ধারণ করতে হবে। ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে মক্কা-মদিনার হোটেল ও পরিবহণসংক্রান্ত
অর্থ স্থানান্তর প্রক্রিয়া, যা চূড়ান্ত করতে হবে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
হজযাত্রীদের ভিসা দেওয়া শুরু হবে ৮ ফেব্রুয়ারি এবং চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত।
হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রা শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।
হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক যুগান্তরকে বলেন, সৌদি সরকারের
নির্দেশনা আমরা যথাযথ অনুসরণ করব। হজের প্রাক-নিবন্ধন করার আগে সিভিল সার্জন কর্মকর্তার
কর্তৃক শারীরিক সুস্থতার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে
অবহিত করব।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)
উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, জটিল রোগাক্রান্তদের হজে যাওয়া উচিত নয়। মৃত্যুর ঝুঁকি
কমানোর জন্য সৌদি সরকার এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি সৌদি নির্দেশনা অনুযায়ী হৃদরোগ,
ফুসফুস ও কিডনি জটিলতা, লিভার সিরোসিস, নিউরোলজি বা স্নায়বিক সমস্যা, কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি
নেওয়া ক্যানসার আক্রান্তদের কারও যদি প্রাথমিক স্টেজে বা মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে, সে
ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড তাদের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারে। যেটি নিয়ে তিনি হজ
পালন করতে পারবেন।
হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, সৌদি আরব হজের রোডম্যাপ
ঘোষণা করলেও অনেক সময় তারা এসব সিদ্ধান্তে অটল থাকে না। এর ফলে বাংলাদেশি হজ এজেন্সিদের
চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। চড়া দামে বুকিং করতে হয় হোটেলসহ নানা সার্ভিস। এছাড়া হজযাত্রীদের
খাবারসংক্রান্ত চুক্তি সৌদি ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে করা বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা
সৌদি আরবের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত নন। অনেক সময় তাদের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ন। ফলে
সৌদি আরবের অনেক সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়।
হজ পোর্টাল সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছর হজের প্রাক-নিবন্ধনকারী রয়েছেন
৩৩ হাজার ৫২৭ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন মাত্র ৬৬১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়
রয়েছেন ৩২ হাজার ৮৬৬ জন। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে হজের কোটা পূরণ করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সৌদি আরবের নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে সামনে এই কোটা পূরণ করা যাবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায়
রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছর বিশ্বের ১৭১টি দেশের ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন হজ পালন করেছেন।
এর মধ্যে বিদেশি হাজির সংখ্যা ১৫ লাখ ৬ হাজার ৫৭৬ জন। আর সৌদি আরবের হাজি ১ লাখ ৬৬
হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি হাজির সংখ্যা ৮৭ হাজার ১৫৭।