মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কীসের ইঙ্গিত?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম

ইরান ও ইসরাইলের চলমান সংঘাতের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে শুরু করে পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরী পর্যন্ত- সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত সপ্তাহে, পেন্টাগন ভূমধ্যসাগরে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী যুদ্ধজাহাজকে ইসরাইলের কাছাকাছি যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউএসএস সুলিভান্স ডেস্ট্রয়ার’ এ সপ্তাহে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রতিরক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য পৌঁছেছে। এছাড়া ‘আরলে বার্ক ডেস্ট্রয়ারও’ এলাকা ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্র ইতালির একটি ঘাঁটি থেকে ১২টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতানের কাছে স্থানান্তর করেছে। সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক স্থাপনায় এফ-৩৫ এবং এফ-২২ র্যাপ্টরের মতো যুদ্ধবিমান স্থানান্তরও করছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন বিমান বাহিনী ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি এবং গ্রিসসহ ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলোতে অতিরিক্ত ২১টি জ্বালানি ভর্তি বিমান এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো সরাসরি সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। তবে, একজন বিশেষজ্ঞ ইঙ্গিত দিয়েছে, ট্যাঙ্কার বিমানের উড্ডয়ন ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ ছিল।
মার্কিন ডেস্ট্রয়ারগুলো বর্তমানে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ছোড়া ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দিচ্ছে। অন্যদিকে ইউএসএস কার্ল ভিনসন পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরীটিও আরব সাগরে অবস্থান করছে, যার স্ট্রাইক গ্রুপে চারটি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।
এদিকে ‘ইউএসএস নিমিৎজ’- পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরীটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পশ্চিমে যাত্রা করছে। জাহাজ-ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম মেরিনট্রাফিক জানিয়েছে, ‘ইউএসএস নিমিৎজ’র সর্বশেষ অবস্থান ছিল মঙ্গলবার ভোরে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে মালাক্কা প্রণালীতে।
এছাড়াও, আরেকটি পারমাণবিক শক্তিচালিত রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ও এক সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপীয় অভিযানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এই পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরীগুলো বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান দিয়ে সজ্জিত এবং নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী সমর্থিত। নিমিৎজ-শ্রেণীর রণতরীগুলো নৌবাহিনীর বৃহত্তম জাহাজ, যা ধনুক থেকে শুরু করে স্টার্ন পর্যন্ত প্রায় ১,১০০ ফুট বিস্তৃত।
এছাড়াও, আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারগুলো লোহিত সাগরে রয়েছে আর অন্যরা পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে এবং বাল্টিক সাগরে মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। গত বছর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কয়েকটি প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছিল, যার মধ্যে দুটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান এবং তার সহযোগীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সহায়তা করার জন্য প্রায় ১০০ সৈন্যসহ একটি টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স ব্যাটারি ইসরাইলে পাঠিয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে কমপক্ষে ১৯টি স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ১১টি অস্থায়ী মার্কিন ঘাঁটি এবং এর মধ্যে ৮টি স্থায়ী মার্কিন ঘাঁটি।
জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, তুরস্ক এবং সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র তাদে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এই দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত, বাহরাইন, মিশর, ইরাক, কাতার, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থায়ী মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত, মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। সর্বাধিক মার্কিন সেনা থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। এসব দেশে থাকা মার্কিন স্থাপনাগুলো বিমান ও নৌ অভিযান, আঞ্চলিক সরবরাহ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রেহের জন্য গুরুত্পূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
তথ্যসূত্র: জিও নিউজ