যে শর্ত মানলে ইরানে হামলার চিন্তা থেকে সরে আসতে পারেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

ইরান ও ইসরাইল সংঘাতের সপ্তম দিনও বুধবার রাতে একে অপরের উপর পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার কথা ভাবছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিলের শর্তে ট্রাম্প হামলা শুরুর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে পারেন।
মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, কিন্তু হামলা চালানো হবে কিনা, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস।
ইরান যদি তাদের পারমানবিক কর্মসূচি বাতিল করতে রাজি হয়, তবে ট্রাম্প হামলা শুরুর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখবেন বলে একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে। এই খবরটি প্রথম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
বুধবার ইরানের ওপর ইসরাইলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি এটা করতে পারি, আমি নাও করতে পারি।
আমেরিকা এখনো পর্যন্ত সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের ঘাঁটি বা ডিয়েগো গার্সিয়াকে কোনো সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহার করার জন্য বলেনি বলে জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন বিল। তবে ইরানিরা বলেছে, তারা হোয়াইট হাউসের দরজায় ঝুঁকবে না।
সিচুয়েশন রুমে ট্রাম্পের বৈঠক শেষ
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নিয়েছেন এবং এই বৈঠক শেষ হয়েছে।
সামরিক ও গোয়েন্দা বিষয়ের অত্যন্ত স্পর্শকাতর আলোচনা এবং ব্রিফিং করার জন্য সিচুয়েশন রুমের মতো নিরাপদ স্থাপনাগুলো ব্যবহার করা হয়। ইরান ও ইসরাইল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করার সময় সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ট্রাম্প তার শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টাদের একত্রিত করেছেন। এর মধ্যে ইরান আলোচনা করতে চায় আবার এমন দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইরান সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের চুক্তি করা উচিত ছিল, তাদের জন্য আমার অনেক ভালো ডিল ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা এটি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এখন তারা চায় তারা এটি করবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ইরানি প্রতিনিধিরা ‘সাক্ষাৎ করতে চায়’ এবং ‘হোয়াইট হাউসে আসতে চায়’ বলে আবার দাবি করেন তিনি।
ট্রাম্প এই প্রথমবারই ইরান দেখা করতে চায় এমন কথা বলেননি। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইরানি সরকার এক পোস্টে বলেছিল, কোন ইরানি কর্মকর্তাকে হোয়াইট হাউসের দরজায় বসে থাকতে বলা হয়নি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলি হামলায় যোগ দেয় তবে অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
ধারাবাহিক হামলার দাবি ইসরাইলি বাহিনীর
ইরানের তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলি বিমান বাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে তেহরান এবং অন্যান্য এলাকায় ধারাবাহিক হামলা শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। তবে হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে আরও বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইসরাইলি বিমান বাহিনী।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী সামরিক অবকাঠামো টার্গেট করার আগে ইরানের আরাক এবং খান্দাবের বাসিন্দাদের ওই এলাকা থেকে সরে যেতে সতর্কতাও জারি করেছিল।
ইরানের আহতের সংখ্যা
ইসরাইলি হামলায় আজ তেহরানে পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে অল্প সংখ্যক কর্মী আহত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানিয়ান পুলিশ। হামলার নিন্দা জানিয়ে ওই বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই হামলা তাদের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না।
ইরান নতুন করে ইসরাইলে আরও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সীমানা অতিক্রম করে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সফলভাবে সেখানে প্রবেশ করেছে।
যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি। তবে ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরাইল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে তবে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
তার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ সেন্ট পিটার্সবার্গে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে ইসরাইল ও ইরানের সংঘাত নিয়ে কথা বলেছেন।
এসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, পুতিন বলেছেন, রাশিয়া কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না। আমরা কেবল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাব্য উপায় কিভাবে দেখতে পাচ্ছি তা নিয়ে কথা বলছি। তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটি এই সব দেশের বিশেষ করে ইরান ও ইসরাইলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
ইরান রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছে কিনা, বার্তা সংস্থা এএফপি এমন বিষয় জানতে চাইলে পুতিন উত্তর দেন, আমাদের ইরানি বন্ধুরা আমাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা (সাহায্য চায়নি) করেনি।
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, আমি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাই না।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে পুতিন বলেন, আমি এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেও চাই না। চাই না আমি।
সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি অর্থনৈতিক ফোরাম চলার এক ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এই সব শুনেছি, কিন্তু আমি এটি নিয়ে আলোচনা করতেও চাই না।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা