Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যেভাবে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ইরান

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০১:২৫ এএম

যেভাবে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ইরান

ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এমন দাবি করে গেল শুক্রবার ভোরে দেশটির বিভিন্ন সামরিক, পরমাণু স্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের বসতিতে নির্বিচার হামলা চালায় ইসরাইল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছে।

জবাবে ইসরাইলের মূল ভূখণ্ডে প্রায় ৪০০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। যাতে অন্তত ২৪ জন ইসরাইলি নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছে। ইরানের লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশজুড়ে ইসরাইলিদের ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হচ্ছে।

ইরানের কিছু হামলা মধ্য ইসরাইলের আবাসিক এলাকায় আঘাত করেছে, যেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তেলআবিবে অবস্থিত ইসরাইলের সুরক্ষিত সামরিক সদর দপ্তর ‘কিরিয়া’-তেও হামলা হয়েছে, যদিও সেখানকার ক্ষতি সীমিত ছিল।

মঙ্গলবার ইরান দাবি করে, তারা ইসরাইলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি অপারেশন প্ল্যানিং সেন্টারে আঘাত করেছে। যেখানে তারা ইসরাইলের বিশ্বের অন্যতম উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইসরাইল তার ‘আয়রন ডোম’সহ অন্যান্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেশিরভাগ আকাশ থেকে আসা হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। তাহলে কীভাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করছে?

ইসরাইলের আয়রন ডোম কী?

‘আয়রন ডোম’ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ব্যবস্থার শুধুমাত্র একাংশ। আল জাজিরার প্রতিরক্ষা সম্পাদক অ্যালেক্স গ্যাটোপোলাস জানান, এটি ‘মাল্টিটিয়ার্ড, ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’-এর সবচেয়ে নিচের স্তরের অংশ।

এই ডোম আসন্ন রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে, তার গতি ও পথ নির্ধারণ করে এবং তা প্রতিহত করে। ইসরাইল দাবি করে, এটি ৯০ শতাংশ কার্যকর। এটি ২০১১ সালে চালু হয়।

এটি মূলত স্বল্প-পরিসরের রকেট আটকানোর জন্য তৈরি, যেগুলো বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধরা পড়ে না।

অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

বারাক-৮: মধ্যম দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র আটকায়;

ডেভিড’স স্লিং: মধ্যম থেকে দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে;

থাড সিস্টেম: স্বল্প, মধ্যম ও মাঝারি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারে;

অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩: দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ইরানের মতো দেশের ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

প্রতিটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তিনটি উপাদান থাকে: রাডার, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার। একবার শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হলে, সিস্টেম বিশ্লেষণ করে কোন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে হবে এবং সাধারণত একটি শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে দুটি ইন্টারসেপ্টর ছোড়া হয়।

ইরান কীভাবে এই প্রতিরক্ষা ভেদ করল?

১. ইন্টারসেপ্টর শেষ করে ফেলা

ইরান একযোগে বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুঁড়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্লান্ত করে তুলেছে। প্রতিটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সীমিত সংখ্যক ইন্টারসেপ্টর থাকে।

২. হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র

ইরান বর্তমানে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (এইচজিভি)’ যুক্ত থাকে, যেমন ফাতাহ-২।

এই এইচজিভিগুলো সাধারণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পূর্বানুমানযোগ্য পথে চলে না, বরং জিগজ্যাগ করে চলে, যা প্রতিরক্ষা সিস্টেমের জন্য চ্যালেঞ্জিং।

৩. ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র

ইরানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যেমন হোভেইজেহ, ধীরে চললেও নিচু দিয়ে উড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এগুলো পাইলটবিহীন বিমানের মতো কাজ করে।

৪. বিভ্রান্তিকর টার্গেট

ইরান ছদ্ম-মিসাইল বা ড্রোন পাঠিয়ে রাডারকে বিভ্রান্ত করতে পারে, যাতে ইসরাইল তার ইন্টারসেপ্টর অপচয় করে ফেলে, এবং আসল ক্ষেপণাস্ত্র ভেদ করে ঢুকতে পারে।

৫. রাডার-প্রতিরোধ প্রযুক্তি:

কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে এমন প্রযুক্তি থাকে যা রাডারকে ফাঁকি দেয়, ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা শনাক্ত করতে পারে না।

ইরান বা ইসরাইলের কি অস্ত্র ফুরিয়ে যেতে পারে?

গ্যাটোপোলাস বলেন, এই যুদ্ধ এখন একটি ‘অপচয়-ভিত্তিক যুদ্ধ’ (ওয়ার অব অ্যাট্রিশন)। ইসরাইল দাবি করছে তারা ইরানের আকাশে প্রভাব বিস্তার করছে, কিন্তু তেহরান থেকে তেলআবিবের দূরত্ব ১০০০ কিলোমিটার—যেখানে বিমান অনায়াসে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে পারে না।

ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আকাশে জ্বালানি পূরণের সুযোগ পেলেও এতে তাদের বিমান স্টিলথ গুণ হারাতে পারে।

সবশেষে প্রশ্ন থেকে যায়, ইরানের হাতে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো? আর ইসরাইলের কাছে কতটি অ্যারো-২ ও ৩ রয়ে গেছে যার মাধ্যমে তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার