সঞ্চয়পত্রে টাকা আটকে যেতে পারে? বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সতর্কতা
বিজনেস ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪০ এএম
বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র বহুদিন ধরেই নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক। কিন্তু শর্ত ও নিয়ম ঠিকমতো না বুঝে বিনিয়োগ করলে এই নিরাপত্তাই অনেক সময় উল্টো ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে। হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে কমে যেতে পারে মুনাফা, বেড়ে যেতে পারে করের বোঝা। তাই সঞ্চয়পত্রে টাকা লাগানোর আগে কোন ঝুঁকিটি সবচেয়ে বেশি এবং কোন ভুল সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হতে পারে তা জানা বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র এখনও অন্যতম নিরাপদ সরকারি বিনিয়োগ মাধ্যম। নির্দিষ্ট মুনাফা, সহজ প্রক্রিয়া এবং মেয়াদ শেষে নিশ্চিন্ত আয় এই সব কারণেই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষ জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের বিভিন্ন স্কিমে বিনিয়োগ করেন। ছোট সঞ্চয় থেকেও তুলনামূলক বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে এর জনপ্রিয়তা কমেনি। তবে অন্যান্য বিনিয়োগের মতো সঞ্চয়পত্রেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা, যা না জানলে পরে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি থাকে।
সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং নির্দিষ্ট শর্তে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য। দেশের বাইরে থেকেও প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। পরিবার সঞ্চয়পত্র স্কিমটি কেবল নারীদের জন্য নির্ধারিত।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যতামূলক নথি জমা দিতে হয় জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, ব্যাংক হিসাব নম্বর, টিআইএন সার্টিফিকেট এবং অর্থের উৎসের প্রমাণ। এসব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না।
প্রতিটি স্কিমের বিনিয়োগসীমা আলাদা। পরিবার সঞ্চয়পত্রে নারীরা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। পেনশনার স্কিমে সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বড় সমস্যাটি দেখা দেয় হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে। সঞ্চয়পত্র দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভাঙাতে হলে মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে বিনিয়োগের আগে আলাদা জরুরি তহবিল রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজন।
২০২১ সাল থেকে DNSS প্ল্যাটফর্মে অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা সম্ভব নয়। ফলে অনেক ক্রেতা নতুন নিয়ম না জানায় কেনার সময় জটিলতায় পড়েন। দালালের মাধ্যমে কেনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; মুনাফা কেবল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই প্রদান করা হয়।
যাদের নিয়মিত নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র উপযুক্ত নয়। অধিকাংশ স্কিমের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর; এর আগে টাকা তুললে মুনাফা কমে যাওয়া অনিবার্য।
বর্তমান মুনাফার হার ১১ থেকে ১২.৫ শতাংশ। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদের হার ধাপে ধাপে কমে যায়। টিআইএন থাকলে উৎসে কর ১০ শতাংশ এবং টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ। পাঁচ লাখ টাকার নিচে কোনো কর কাটা হয় না।
মূল্যস্ফীতি বাড়লে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত লাভ কমে যায়, কারণ মুনাফার হার স্থির থাকলেও বাজারদর বাড়তে থাকে। তাই দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনায় মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
সবশেষে বলা যায়, সঠিক নিয়ম জানা থাকলে সঞ্চয়পত্র একটি নিরাপদ এবং স্থিতিশীল বিনিয়োগ। তবে অর্থ ব্যবস্থাপনা, কর–বিধি, জরুরি প্রয়োজন এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা না করলে পরবর্তীতে অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।