Logo
Logo
×

অর্থনীতি

দেশের প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ এখন লাখের ওপরে

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৫ এএম

দেশের প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ এখন লাখের ওপরে

ষাট ঊর্ধ্ব আফসানা সংসার চালান ফুল বিক্রি করে। প্রতিবন্ধী মেয়েসহ চার সদস্যের পরিবারে নিত্য টানাপড়েন থাকলেও নেই কোনো ব্যক্তিগত ঋণ। তবুও সরকারের নেওয়া ঋণের বোঝা তার ওপরও—মাথাপিছু এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। শুধু আফসানা নন, আকলিমা, রোজিনা—দেশের অধিকাংশ কর্মজীবীর অবস্থাই একই। নিজের অজান্তে গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু ঋণ ৩৭ হাজার টাকা থেকে ২৩৬ শতাংশ বেড়ে এক লাখ টাকার বেশি হয়েছে।

জানতে চাইলে আফসানা বলেন, চার সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনো রকমে দিন যাচ্ছে। গত ২৫ বছর ফুল বিক্রি করেই সংসার চালাই। তবে মানুষের কাছে ধার দেন থেকে দূরে থাকি। এই ফুল বিক্রি করেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু লেখা পড়া জানি না। তাই সরকারের ঋণের খবরও জানি না।

তথ্য বলছে, বাজেট বাস্তবায়ন, উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়, কম রাজস্ব আদায় এবং পরিচালন ব্যয় মেটাতে ঋণনির্ভরতা বাড়ায় দেশের সরকারি ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় উৎস থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে মাথাপিছু ঋণের ওপর। বর্তমানে দেশের প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ আজ যে শিশু জন্ম নেবে, তার জন্মের প্রথম দিনেই এত টাকা ঋণের দায় বহন করতে হবে।

যদিও জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের ঋণের আকার এখনও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেনি, তবে রাজস্ব ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেশের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন সুদ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে সরকারের ব্যয়সংকোচন, উন্নয়ন ব্যাহত হওয়া এবং আর্থিক চাপ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুন পর্যন্ত সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ মিলিয়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৫২ হাজার ১১১ কোটি টাকা। দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় এতে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৬ হাজার ৫৯৫ টাকা। অন্যদিকে দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৮২০ ডলার বা প্রায় তিন লাখ ৪১ হাজার ২২০ টাকা। যদিও আয় মাথাপিছু ঋণের চেয়ে বেশি, তবুও দ্রুত বাড়তে থাকা ঋণ এবং সুদ পরিশোধের চাপ সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে সরকারের যেই ঋণ আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ সরকার যে সব ঋণ নেয় সেগুলো দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। যা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে। তবে সরকারের ঋণ কি পরিমাণ নিবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করাই ভালো। ফিসক্যাল পলিসি ও মনিটরি পলিসির মধ্যে সব সময় সমন্বয় থাকা দরকার।

গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সময়ে দেশের মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ২৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জুনে মাথাপিছু ঋণ ছিল মাত্র ৩৭ হাজার ৬৩৮ টাকা, যা এখন তিন গুণেরও বেশি হয়েছে। একই সময়ে সরকারের মোট দেশি-বিদেশি ঋণও বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। ২০২০ সালে যেখানে মোট ঋণ ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭৭ কোটি টাকা, সেখানে এখন তা ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

২০২০ সালের ঋণের গঠন অনুযায়ী, সেই সময় বিদেশি ঋণ ছিল ৪৮ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার হিসেবে চার লাখ ১৩ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া ঋণ ছিল এক লাখ ৮০ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার