৫ ব্যাংক একীভূত: বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম
পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ইসলামী ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। শেয়ারবাজারে এসব ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত করায়, অভিহিত মূল্যে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। তবে এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা হারাতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।
দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একক ব্যাংক গঠনে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যাংকগুলোর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এসব ব্যাংকের প্রতি শেয়ারের নিট সম্পদমূল্য ইতিমধ্যেই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেতিবাচক, অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর দেনা সম্পদের চেয়ে বেশি। ফলে ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকের কোনো অংশ পাবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অভিহিত মূল্য হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারমূল্যে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের, যার অভিহিত মূল্য ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। কিন্তু বাজারে এর মূল্য এখন মাত্র ২১৫ কোটি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩০১ কোটি টাকায়, এক্সিম ব্যাংকের ২৯৩ কোটি।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ. ন. ম. আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘আমরা যে এখান থেকে কিছুই পাব না, এ বিষয়ে আমাদের আগেই সচেতন করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে আমরা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতাম। যারা লুট করেছে, যারা ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করেছে, তাদেরকে সেফ এক্সিট দিতেই এ কাজ করা হলো কিনা— সে বিষয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন রয়েই গেছে।’
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল আমিন বলেন, ‘দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় স্বার্থ চিন্তা করে যদি কোনো কিছু করতে পারে, সেটা করতে কিন্তু আইনগতভাবে তারা বাধ্য না। তবে জনকল্যাণে বা জনস্বার্থে যদি তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। এছাড়া আইনিভাবে কিন্তু আপনি কোনোভাবেই বলতে পারেন না যে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিন। আমানতকারী যিনি ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তিনিই টাকা পাচ্ছেন না; আর যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারও তো একই অবস্থা। দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকরা ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংকে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। তবে এ প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।