কেন স্বর্ণের দাম এত বাড়াচ্ছে বাজুস?

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৭ এএম

চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশের বাজারে ছয় দফায় বেড়েছে স্বর্ণের দাম; প্রতিবারই ভেঙেছে আগের রেকর্ড। এতে বিক্রি কমলেও বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম না বাড়ালে চোরাচালান বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে বলে দাবি বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস)।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, সংগঠনটি তুলনামূলক দাম বেশি বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণমূল্য দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, যে হারে দাম বাড়ছে, সে হারে মনে হয় না ভবিষ্যতে কেনাকাটা করতে পারব। আমার তো মেয়ের বিয়ে এখন, ওই উদ্দেশ্যেই কিনতে হবে। দাম যতই হোক না কেন, আগে ছোটখাট কানের দুল, নাকের ফুল বা লকেট জাতীয় গয়না কেনা যেত, উপহারও দেয়া যেত; কিন্তু এখন এত বেড়ে গেছে যে কিছুই চিন্তা করা যাচ্ছে না।
শুধু অলংকার নয়, অস্থির বিশ্ব অর্থনীতিতে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে এবং বিভিন্ন দেশের রিজার্ভে সঞ্চয় বাড়াতে চাহিদা বেড়েছে স্বর্ণের। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে টানা ছয় দফায় ২০ হাজার ৯৪৮ টাকা বেড়ে এক ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। মাত্র এক মাসে ভরিতে বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার টাকা, আর বছরে বেড়েছে ৭৬ হাজার টাকার বেশি। দামের ভারে কমেছে বিক্রি।
এক বিক্রেতা বলেন, ‘দাম বাড়লে বেচাকেনা কমে যায়। আগে যেখানে পাঁচ ভরি বিক্রি করতাম, এখন তিন ভরিও বিক্রি করা যায় না। টাকার অংকে বিক্রি বাড়লেও আমাদের লাভের পরিমাণ তেমন বাড়ে নাই।’
আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘লাখো মানুষের এখানে কর্মসংস্থান। কিন্তু এভাবে স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা কমে যাবে, ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
বিক্রিতে ভাটা পড়লেও ঊর্ধ্বমুখী বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল না মিলাতে পারলে চোরাচালান বাড়বে—এমন শঙ্কা থেকেই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাজুস।
বাজুসের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর সব কারেন্সি আপনি নির্দিষ্ট জায়গায় ভাঙ্গাতে পারেন, কিন্তু স্বর্ণ এমন একটি বস্তু যা পৃথিবীর কোনো জনপদেই এক্সচেঞ্জ করা যায়। আমাদের তিন দিক ঘেরা ভারত বিশাল বাজার। ভারতের সঙ্গে আমাদের সহজ যোগাযোগ আছে। এখানে যদি দাম না বাড়ে বা কমে, তাহলে এখান থেকে স্বর্ণ চলে যাবে ভারতে।’
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অতি সতর্কতায় তুলনামূলক বেশি বাড়িয়ে দাম সমন্বয় করছে বাজুস। চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে তুলনা করলে এবং এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী হিসাব করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্বর্ণের দাম কিছুটা বেশি। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের তুলনাতেও আমাদের রেট বেশি। অনেকদিন আগেই বাজার কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবু এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে যে রেট তোমরা অভ্যন্তরীণ বাজারে ধার্য করছো, তা কেন এত বেশি।’
দাম নির্ধারণের মান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণমূল্য দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা রিজার্ভ ডলারে হিসাব করি। একইভাবে স্বর্ণের যে সংরক্ষণ আছে, বাজারমূল্য বাড়লে সেটিও আজকের দরে কনভার্ট করে রিজার্ভের সঙ্গে যোগ করা হয়। ফলে স্বর্ণের মূল্য যত বাড়বে, রিজার্ভে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর ইঙ্গিত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৬৫০ ডলার।