৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য বড় সুখবর
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংকের লাখো গ্রাহকের জন্য বড় স্বস্তির খবর দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আলোচিত পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের হিসাব নতুনভাবে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই গ্রাহকরা নিজ নিজ ব্যাংকের বিদ্যমান চেক বই ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য জানান।
অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ঋণ খেলাপির চাপে দেশের কয়েকটি ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে তীব্র তারল্য সংকটে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটে থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো হলো এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমানত স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হতে পারে। প্রক্রিয়া শেষ হলে এই পাঁচ ব্যাংকের সব গ্রাহকের জমা অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তরিত হবে। এরপর গ্রাহকরা তাদের পুরোনো চেক বই ব্যবহার করে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। অবশিষ্ট আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে এবং তাতে প্রচলিত হারে মুনাফাও দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, নতুন এই ব্যাংক রাষ্ট্র মালিকানাধীন হওয়ায় আমানতকারীদের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরে আসবে। এতে অতিরিক্ত টাকা তোলার চাপও অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে একজন গ্রাহক একবারে দুই লাখ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না। তবে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সীমা বাড়ানো হবে। যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার কম রয়েছে, তারা একবারেই পুরো টাকা তুলতে পারবেন। আর যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি জমা আছে, তারা চাইলে প্রতি তিন মাস অন্তর এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত টাকা তুলতে পারবেন। ৬০ বছরের বেশি বয়সী ও গুরুতর রোগে আক্রান্ত আমানতকারীদের ক্ষেত্রে এই সীমা শিথিল রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা যেকোনো পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর সেনাকল্যাণ ভবনে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ আমানতকারীর মোট জমা রয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সারা দেশে এসব ব্যাংকের রয়েছে ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশা, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং গ্রাহকদের আস্থার সংকট কাটবে।