ভোমরা দিয়ে ভারত ভ্রমণে যাত্রী খরা, ব্যবসায় ভাটা
জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর বাণিজ্যিক ও যাত্রী যাতায়াতে গত কয়েক বছরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারতের কলকাতায় যাতায়াতের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থলবন্দর এটি। ওপারে ঘোজাডাঙ্গা। পণ্য আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক মানুষ এ বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন।
তথ্য বলছে, বিগত বছরগুলোতে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দুই হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। তবে ৫ আগস্টের পরে চিত্র পাল্টেছে। সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা সংকোচন ও নানান শর্ত আরোপ শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে এখানকার ইমিগ্রেশনে। ব্যস্ত এ স্থলবন্দর দিয়ে এখন ভারতে যাওয়া ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা এখন নেমেছে শতকের ঘরে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারত গেছেন মাত্র ৯২ জন যাত্রী। আর ভারত থেকে এসেছেন ৭১ জন।
দুই দেশের সম্পর্কের বৈরিতায় বাংলাদেশে ভারতীয়দের আসার সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ওইদিন ভোমরা বন্দর দিয়ে এসেছেন ৪৪ জন ভারতীয় নাগরিক আর ফিরে গেছেন ৫৩ জন।
আরও পড়ুনভোমরা স্থলবন্দর এখন কাস্টম হাউজঅবকাঠামো সংকটে থেমে আছে ভোমরা বন্দরের উন্নয়নভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমলেও বেড়েছে রাজস্বছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আয় করেছে ভোমরা বন্দর
ভারতে যাওয়া অধিকাংশ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চিকিৎসা ভিসায় যাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার ভারত ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন। এ বন্দর দিয়ে কলকাতা যাওয়ার খরচ বাংলাদেশি ১০০ টাকারও কম। লোকাল ট্রেন ব্যবস্থার কারণে এত কম খরচে কলকাতার শিয়ালদাহ স্টেশনের গিয়ে নামা যায়। গাড়ি কিংবা ট্রেনে যেতে সময় লাগে দুই-আড়াই ঘণ্টা। ফলে যাত্রীদের পছন্দের বন্দর এটি।
ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণকারীদের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। এখন মেডিকেল ছাড়া অন্য ভিসা মিলছে না। প্রতিদিন সব মিলিয়ে এক থেকে দেড়শ যাত্রীর বেশি যাতায়াত করছে না। আগে এ সংখ্যা এক থেকে দুই হাজারের ঘরে ছিল।
যাত্রী না থাকায় বন্দরের কার্যক্রমও চলছে ঢিলেঢালা। যাত্রীসেবা ও ব্যাগ স্ক্যানিং ভবনে ১০-২০ মিনিট পর আসছেন দু-একজন করে যাত্রী। চাপ না থাকায় খুব অল্প সময়ে তারা কার্যক্রম সেরে রওয়ানা হচ্ছেন চেকপোস্টের দিকে। আগে সেখানে দীর্ঘ লাইন এবং শত শত মানুষের আনাগোনা থাকতো। এসব জায়গা এখন প্রায় খালি খালি দেখা গেছে।
এদিকে বন্দরের যাত্রী পারাপারের কমতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোমরা বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও। সেখানে অর্ধশত ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়ার জন্য থাকা দোকানগুলোতে যাত্রীর কোনো চাপ দেখা যায়নি। বন্দরের আশপাশের অন্য দোকান, হোটেল এবং স্থানীয় যানবাহনেও চাপ নেই। অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার।
চেকপোস্টের কাছাকাছি ট্রাভেল টাক্স দেওয়া দোকানি রোহান টেলিকমের রেদোয়ান বলেন, ‘এখন আর আমাদের ব্যবসা নেই। সারাদিন বসে বসে দু-তিনজন যাত্রীও পাই না ভারত যাওয়ার।
আরেক দোকানি সৌমিত্র বলেন, আগে দিনে ৭০-৮০ জনের ট্রাভেল টাক্স কাটতাম। এখন দুপুর, তারপরও মাত্র ১২টা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারতে মানুষ মূলত ট্যুরিজম বা কেনাকাটার জন্য যেত। দুর্গাপূজা ও বিয়ের মৌসুমে প্রচুর লোক হতো। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে দুর্গাপূজা গেলো, এখন বিয়ের মৌসুম চলছে কিন্তু ভারত ভিসা কড়াকড়ি করায় যাত্রী নেই।
জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতি বছর ভোমরা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দুই থেকে তিন লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করতেন। বর্তমানে চাহিদা অনুপাতে ভিসা না পেয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় ছেদ পড়েছে তাদের।
চেকপোস্টে কথা হয় ভারত যাওয়া গৌড় চন্দ্র নামে একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, অনেক কষ্টে তিনি মেডিকেল ভিসা জোগাড় করেছেন। কয়েক মাস আগেও তিনি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন, আবারও যাচ্ছেন ডাক্তার দেখাতে।
এদিকে কিছু যাত্রী অভিযোগ করেন, এখন ভারতের মেডিকেল ভিসা পেতেও উৎকোচ দিতে হচ্ছে। দালালদের বাড়তি টাকা না দিলে ভিসা মিলছে না।
এ বিষয়ে কথা হয় একজন বাংলাদেশি ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে। তিনি নাম না প্রকাশ করে বলেন, ভারত অনেক সময় মেডিকেল ভিসাও প্রত্যাখ্যান করছে। যে কারণে যাত্রীরাও বাড়তি টাকা দিয়ে ভিসা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।
এ অপারেটর আরও জানান, তার কোম্পানি আগে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ জন ভারতে যাওয়ার যাত্রী পেত। কিন্তু গত এক মাসে মাত্র আটটি মেডিকেল ভিসার যাত্রী পেয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরে লোকসান দিচ্ছে তার কোম্পানি।
এভাবে বন্দরকেন্দ্রিক যাদের জীবন-জীবিকা তারা সবাই কষ্টে দিনযাপন করছেন। অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ভারত আবার আগের মতো ভিসা ইস্যু করা শুরু করবে- এমন প্রত্যাশায় কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন অনেকে।