জন্ম থেকেই হাত নেই, ছোট আরশাদুল পা দিয়েই লেখে
জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ এএম
জন্ম থেকেই নেই দুই হাত। তবুও হার মানতে শেখেনি প্রতিবন্ধী শিশু আরশাদুল ইসলাম। বাঁচার আশা-ভরসা একটাই, পড়াশোনা। কিন্তু আর্থিক অনটন তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বই-খাতা নিয়ে আবারও স্কুলে ফিরতে চায় সে। নিজের অক্ষমতাকে জয় করে সে চায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের শিদলাই ৮নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকায় নানাবাড়িতেই বসবাস করছে আরশাদুল। সেখানে নানির কাছে থেকেই বড় হচ্ছে সে। তার বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের শিমরাইল গ্রামে। তবে জন্মের পর থেকে নানাবাড়িতেই আছেন আরশাদুল।
আরশাদুল ইসলামের বাবা সুমন মিয়া ছিলেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তিন বছর আগে তার আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে পরিবারটি। এরপর থেকে আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবারটি। তারপরও নানির সহায়তায় আরশাদুল পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গত একবছর ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে না। অর্থাভাবে বন্ধ হতে বসেছে আরশাদুলের পড়াশোনা। পড়াশোনা চলমান থাকলে সে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার কথা।
আরশাদুলের মা মিনুয়ারা বেগম ব্রাহ্মণপাড়া সদরের একটি ভাড়া বাসায় অন্য সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তিনি সেলাইয়ের কাজ করেন। জীবন জীবিকার টানে ছেলে আরশাদুলকে রেখে যেতে হয়েছে নানার বাড়িতে।
পরিবারের অভাব-অনটন আর জীবনসংগ্রাম আরশাদুলকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। স্কুলে যেতে না পারলেও বইয়ের প্রতি তার টান আজও একই রকম। সুযোগ পেলেই বই-খাতা নিয়ে বসে আরশাদুল। সহযোগিতা পেলে আবার স্কুলে ফিরতে চায় সে। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখে আরশাদুল।
স্থানীয়রা বলছেন, জন্মগত শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আরশাদুল খুব মেধাবী। সুযোগ-সুবিধা পেলে সে এগিয়ে যেতে পারবে। প্রতিবন্ধী এই শিশু আরশাদুলের জন্য সরকারি বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
মোবাশ্বের হোসেন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ছেলেটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই তার দুই হাত নেই। তবু সে পা দিয়ে লিখে। পড়াশোনার প্রতি তার খুব আগ্রহ। তবে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে সহযোগিতা পেলে সে অনেকদূর যেতে পারবে আমার বিশ্বাস।
শিশু আরশাদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা নেই। সংসারের সব খরচ চালিয়ে মা ও নানি আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। তবে আমি পড়াশোনা করতে চাই। পড়াশোনা করে আমি আমার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে চাই।
আরশাদুলের নানি কোহিনূর বেগম বলেন, ছোট থেকেই আমি আরশাদুলকে লালনপালন করছি। তাকে ব্র্যাক স্কুলে পড়িয়েছি। কিন্তু অর্থের অভাবে এখন আর পড়াশোনা করাতে পারছি না। লেখাপড়ার প্রতি আরশাদুলের আগ্রহ আছে, কোনোভাবে সহযোগিতা পেলে তাকে পড়াশোনা করানো সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর কালবেলাকে জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু আরশাদুল ইসলাম প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। সে তার নানার বাড়িতে থাকে। তার পারিবারিক অবস্থা ততটা সচ্ছল নয়। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সরকার বিনামূল্যে বই দেয়। তারপরও যদি তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহায়তা করব। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও সুযোগ থাকলে তাকে সহায়তা করা হবে।