Logo
Logo
×

সারাদেশ

মেয়ের দাফনে থাকতে পারেননি, স্ত্রীর জন্যও সিট পেলেন না হাসপাতালে

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ এএম

মেয়ের দাফনে থাকতে পারেননি, স্ত্রীর জন্যও সিট পেলেন না হাসপাতালে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ১০ মাস বয়সী কন্যাশিশু ফাতেমা নিহত হয়েছে। এ সময় তার মা কুলসুম বেগম (৩০) ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্প শুরু হলে ১০ মাস বয়সী মেয়ে ফাতেমাকে কোলে নিয়ে পাশেই বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন কুলসুম। বাবার বাড়িতে ছিল তাদের ৩ বছরের আরেক মেয়ে নুজাইবা।

এদিকে বাড়ি থেকে বেরোতেই সড়কের পাশে ধসে পড়া দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন মা-মেয়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ১০ মাসের ফাতেমা। উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফাতেমা ওই এলাকার আবদুল হকের মেয়ে।

এ ঘটনার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত কুলসুম বেগমকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন স্বজনেরা। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটতে গিয়ে মেয়ের দাফনে অংশ নিতে পারেননি আবদুল হক। বিকেলে মা-বাবার অনুপস্থিতিতেই দাফন হয় ছোট্ট ফাতেমার। সরকারি হাসপাতালে শয্যা খালি না পেয়ে কুলসুমকে আপাতত রাজধানীর শ্যামবাজারে স্বামীর ভাড়া বাসায় রাখা হয়েছে।

অসুস্থ কুলসুম তার আদরের ফাতেমার মৃত্যুর খবর এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, দুই মেয়ে নিয়ে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুল হক ও কুলসুম বেগমের সংসার। ব্যবসার প্রয়োজনে আবদুল হক থাকেন রাজধানীর শ্যামবাজারে ভাড়া বাসায়। দুই মেয়েকে নিয়ে রূপগঞ্জের ৫ নম্বর ক্যানেলপাড় এলাকায় বাবার বাড়ির পাশে ভাড়া থাকেন কুলসুম। দুই শিশুসন্তান নিয়ে আনন্দেই দিন কাটছিল তাদের।

বয়স হলে দুই মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানোর পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের ভূমিকম্পে ওলটপালট হয়ে গেছে তাঁদের সংসার। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, ভূমিকম্প শুরু হলে কুলসুম শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে মায়ের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় প্রতিবেশী জেসমিন বেগমও আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়ে সড়কের পাশে আশ্রয় নেন। ঠিক তখনই সড়কের পাশের একটি সীমানাপ্রাচীর ধসে কুলসুম, তাঁর কোলে থাকা ফাতেমা এবং জেসমিনের ওপর পড়ে। ইটের চাপায় মাথা থ্যাঁতলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। পরে আশপাশের লোকজন দেয়ালের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেন। আহত দুই নারীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ রনি বলেন, ঘটনার সময় ফাতেমা মায়ের কোলে ছিল। আমরা ইটের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ বের করি। কুলসুম তখন সংজ্ঞাহীন ছিলেন। ফলে ফাতেমার মৃত্যুর খবর তিনি জানতে পারেননি।

দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে, সেটির কোনো পিলার ছিল না। এমনকি রডও ব্যবহার করা হয়নি। প্রাচীরটি অন্তত ১০ ফুট উঁচু ছিল। নিহত শিশুর দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

এদিকে স্বজনদের অভিযোগ, টানা ৯ ঘণ্টা চেষ্টা করেও প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া উন্নত কোনো চিকিৎসা পাননি কুলসুম বেগম। তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হোসেন রাত ৮টায় জানান, বেলা ১১টার দিকে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জানানো হয়, শয্যা খালি নেই। পরে তারা কুলসুমকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও শয্যা খালি পাননি। এরপর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও শয্যা পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাঁরা ঢাকার বাসায় নিয়ে যান কুলসুমকে।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সারা দিনে ১১ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়েছি। কুলসুমের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। ইশারায় কথা বলে। কোথাও প্রত্যাশিত চিকিৎসা পাইনি। টাকার ব্যবস্থা হলে প্রাইভেটে ভর্তি করাব।

এ বিষয়ে ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বজনেরা জানিয়েছিলেন তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাননি, সেটা জানা ছিল না।

পরে কুলসুমের এক স্বজনের নম্বরে যোগাযোগ করে খোঁজ নেন ইউএনও। রাত ৯টায় তিনি বলেন, চিকিৎসা না পাওয়াটা দুঃখজনক। আমরা কুলসুমের চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার