ঘুষের টাকা গুনছিলেন ভূমি অফিসের কর্মচারী, অতঃপর...
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তারের (৪৫) বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এমন ভিডিওটি প্রকাশের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির নামজারি, খাজনা ও অন্যান্য নথিসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘদিন ধরেই ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী গোপনে লুৎফা আক্তারের ঘুষ দেওয়ার দৃশ্য গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, লুৎফা আক্তার টেবিলে বসে টাকার বান্ডিল গুনছেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাজ দ্রুত করে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন।
ভিডিওটি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ লুৎফা বেগমের বিষয়-সম্পত্তির দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পক্ষে একাধিক ফ্ল্যাট কেনা কীভাবে সম্ভব? প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত না করায় তাঁরা হতাশা ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জারিকারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লুৎফা আক্তার। এর আগে তিনি অন্য একটি ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের টাকায় তিনি মুন্সীগঞ্জ শহরের আফতাব প্লাজা ও জিএইচ সিটি সেন্টারে দুটি দামি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবাপ্রার্থী জানান, শিল্প এলাকা হওয়ায় পঞ্চসারের জমিসংক্রান্ত যেকোনো কাজে ভূমি অফিসের কর্মীদের ইশারার ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা বলেন, ‘ঘুষ না দিলে কোনো কাজই এখানে হয় না। ঘুষ দেবে যে, নেবে যে—দুজনেই অপরাধী, কিন্তু বাধ্য হয়েই ঘুষ দিতে হয়।’
এক ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘এক লাখ টাকার বেশি ঘুষ দেওয়ার পরও লুৎফা আমাকে উল্টো দালাল বলে অপমান করেন। এতে খুব লজ্জায় পড়েছি।’
আরেকজন জানান, তিনি ৮০ হাজার টাকা লুৎফাকে এবং আরও এক লাখ টাকা আরেক কর্মকর্তাকে দেওয়ার পরও জমির বিষয়ে নামজারি হয়নি। ঘুষের বিষয়ে লুৎফা তাঁর স্কুলজীবনের বান্ধবীকেও ছাড় দেননি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে লুৎফা আক্তার জানান, তিনি ফোনে কোনো মন্তব্য দেবেন না। তিনি অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আবুল খায়ের শামীম জানান, ঘুষের লেনদেন সম্পর্কে তিনি অবগত নন। লুৎফার সম্পদ বিবরণী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিধিমালা অনুযায়ী হলফনামায় সম্পদের বিবরণ থাকে কি না, তা আমার জানা নেই।’
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজানা আক্তার বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসন যাচাই-বাছাই করছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’