‘ঢাকা লকডাউনে টাকা দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী’
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ সফলের লক্ষ্যে নাশকতা করতে টাকা দিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফারুক হোসেন ওরফে বোম ফারুক।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল এসব তথ্য জানান।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ফারুক হোসেনকে আদালতে পাঠায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার নুরজাহান টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় ওই বাসা থেকে যুব মহিলা লীগের সদস্য নাসরিন আক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে মোট ৬টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল জানান, সারা বাংলাদেশকে অচল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, মহিলা যুবলীগের কর্মীরা গত ৯ নভেম্বর ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে। সেই মিছিলটি ফারুক হোসেনের মদদে হয়। বর্তমান সরকারকে উৎখাত, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ সরকারের বিপক্ষে নানা ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয় সেই মিছিল থেকে। এরপর বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ।
বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের ঝিলটুলী এলাকার নুরজাহান টাওয়ারের ১০ তলার এক ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয় ফারুক হোসেনকে। এ সময় নাসরিন আক্তার নামের যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, আওয়ামী লীগের ডাকা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী তার কাছের মানুষ ফারুক হোসেনকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ফারুক হোসেন একজন ব্যক্তিকে দিয়েছেন বলে জানান। সেই ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া ফারুক হোসেন বিভিন্ন সময়ে প্রোগ্রাম করার জন্য বিকাশে তার দলীয় লোকজনকে অর্থ প্রেরণ করেন বলে জানিয়েছেন।
ফারুক হোসেনের মোবাইল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা লকডাউন সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করেছেন তিনি।
ফারুক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘বোম’ শব্দ যোগ হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ১৯৮১ সালে তিনি শহরের টেপাখোলা এলাকায় অবস্থিত ইয়াসিন কলেজের ভিপি ছিলেন। ওই সময়ে ছাত্রদলের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপের সময় বোমাটি ফারুক হোসেনের হাতে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে তার বাম হাতের একটি আঙ্গুল উড়ে যায়। সেই সময় থেকেই ফারুক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘বোম’ শব্দ যোগ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি ফরিদপুরে বোম ফারুক নামেই বেশি পরিচিত। ফারুক হোসেনের নামে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থাকায় চারটি এবং রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় দুটিসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনি জানান, তার সঙ্গে আটক হওয়া নারী মহিলা যুবলীগের সদস্য, তবে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়ার রটনা সত্য নয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হবে ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। মামলায় উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম বাদী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, আগামী ১৩ তারিখের ‘ঢাকার লকডাউনে’ নাশকতা রোধে ফরিদপুর জেলাসহ বিভিন্ন থানা এলাকা হতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জনকে আটকসহ গত তিন দিনে ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আওয়ামী যুবলীগ নেতা রয়েছেন। গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।