মনোনয়নবঞ্চিত নেতার বক্তব্য শুনে হৃদরোগে মারা গেলেন বিএনপিকর্মী
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ এএম
সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার আবেগঘন বক্তব্য শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিএনপির এক কর্মী। আরেক কর্মী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে তাহিরপুর বাজারে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আবেগঘন বক্তব্য দেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল।
তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় তার প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং তাকে মনোনয়ন দানের দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী বিপ্লব ও সংহতি দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মধ্যতাহিরপুর গ্রামের শুলতু মিয়া (৫৫) ও একই উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিএনপিকর্মী মোদাচ্ছির আলম হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মোদাচ্ছির এখন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, কামরুজ্জামান কামরুলকে প্রতিটি সমাবেশে নেতাকর্মীরা ভালোবেসে টাকার মালা, ব্যাংকের চেক উপহার দেন। নারীরাও জমানো টাকা, সোনা গয়না বিক্রি করে তাকে সমাবেশে উপহার দেন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে দলের প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। সুনামগঞ্জ-১ আসনে কামরুজ্জামান কামরুলের বদলে উপজেলা নির্বাচনে কামরুলের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত আনিসুল হককে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এই খবরে ওইদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন কামরুজ্জামান কামরুলের রাজনৈতিক ভক্ত ও বিএনপি কর্মী উজান তাহিরপুর গ্রামের শুলতু মিয়া (৫৫)।
শুক্রবার কামরুজ্জামান কামরুল বিপ্লব ও সংহতি দিবসে আসবেন এই খবর পেয়ে তিনি অসুস্থ শরীরেও অংশ নেন। কামরুল যখন আবেগঘন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন আবার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে নিচে পড়ে যান তিনি। দলীয় কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে একই সময়ে বিএনপিকর্মী মোদাচ্ছির আলমও কামরুলের আবেগঘন বক্তব্য শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনিও হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন কামরুল। সেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে তার চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী শুলতু মিয়ার ছেলে ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম নবাব বলেন, আমার বাবা আমাদের নেতা কামরুজ্জামান কামরুলের মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বাবা কামরুল সাহেবের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন। এই অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি শুক্রবার সমাবেশে আসেন। কামরুজ্জামান কামরুল যখন আবেগঘন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তিনি নিচে পড়ে যান। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি কর্মী মোদাচ্ছির আলম বলেন, আমাদের আসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কর্মীবান্ধব নেতা কামরুল ভাই। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছি। এই কষ্ট নিয়ে শুক্রবার যখন সমাবেশে যাই তখন তার আবেগঘন বক্তব্য শুনে বুকে ব্যথা অনুভব করি। পরে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, কামরুল আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। তিনি আমাদের মনের ভাষা বুঝেন। তৃণমূল তার জন্য পাগল। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যে থাকবে তার জামানত থাকবে না। আমরা দলীয় ফোরামে কামরুল ভাইকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাই।
মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমার টাকা-পয়সা নেই। আমার সভা সমাবেশে নেতাকর্মীরা খরচ তুলে পরিচালনা করেন। সাধারণ নেতাকর্মীরাই আমার ভালোবাসা। তারা আমাকে কতটা ভালোবাসে সেটা বুঝানো সম্ভব না। আমার একজন ভক্ত আবেগাপ্লুত হয়ে আমার বক্তব্যের সময় হৃদরোগে মারা গেছেন। আরেকজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন। মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকার আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা দিয়ে অসংখ্যবার জেলে নিয়েও আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেনি। এসব মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান আমি কিভাবে শোধ করব জানি না। প্রয়োজনে তাদের জন্য আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আমি কর্মী হারানোর শোকে স্তব্দ।