Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে কারণে থেমে গেল সুরমা ও তাওজেনের ঘর বাঁধার স্বপ্ন

চীনে ফিরে যাচ্ছেন সেই যুবক

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

যে কারণে থেমে গেল সুরমা ও তাওজেনের ঘর বাঁধার স্বপ্ন

ভালোবাসার টানে হাজার মাইল দূর চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন ওয়াং তাওজেন। ভালোবাসার মানুষ সুরমা আক্তারকে বিয়ে করার প্রত্যাশায় দিন গুনছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতা আর দূতাবাসের সতর্কবার্তায় থেমে গেল সেই স্বপ্ন। বিয়ে না করেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন চীনা নাগরিক তাওজেন।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই নিজ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সুরমার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রায় দেড় মাস আগে ‘ওয়াল টক’ নামের একটি অনলাইন অ্যাপে সুরমা ও তাওজেনের পরিচয় হয়। কথা বলতে বলতে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তাওজেন বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

চীনের গুয়াংজু প্রদেশ থেকে বিমানে করে তিনি আসেন বাংলাদেশে। সুরমার পরিবারের সদস্যরাও প্রথমে বিষয়টিতে আপত্তি করেননি। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়।

রোববার (২ নভেম্বর) দিনটি নির্ধারিত ছিল তাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বিয়ের আয়োজনের আগে আইনগত জটিলতা সামনে আসে। এরপর সোমবার আদালতের মাধ্যমে বিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু আদালতের আইনজীবীরা জানান, বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বিবাহের ক্ষেত্রে দূতাবাসের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই পরামর্শেই তাওজেন চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করেন।

চীনা দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশি নারীদের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে সম্প্রতি তারা বিশেষ সতর্কতা জারি করেছেন।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনে নারী-পুরুষের অনুপাত ভারসাম্যহীন হওয়ায় অনেক পুরুষ বিদেশি নারীকে বিয়ে করার চেষ্টা করছেন। এর সুযোগে কিছু মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বিদেশি নারীকে বিয়ে করতে হলে নিজ দেশের কঠোর আইন মেনে চলতে হবে এবং অবৈধ ম্যাচমেকিং এজেন্সি ও অনলাইন প্রতারণা থেকে দূরে থাকতে হবে।

দূতাবাসের ওই নির্দেশনার পর বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখান থেকেও বিয়ের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইনি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ফলে সব প্রস্তুতি নিয়েও বিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

এই সময়ের মধ্যে তাওজেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয় এক মসজিদে ইমামের মাধ্যমে তিনি ধর্মান্তরিত হন।

সুরমার চাচা বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে এবং আদালতের মাধ্যমে বিয়ে পড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু আইনি জটিলতা আর দূতাবাসের নিষেধাজ্ঞায় সেটা সম্ভব হয়নি। তাওজেন নিজেও বিষয়টি বুঝেছে। সে জানিয়েছে, দেশে ফিরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরে সুরমাকে বিয়ে করবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, তাদের সরকার সম্প্রতি এই ধরনের আন্তসীমান্ত বিয়েতে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে।’

প্রেমের টানে চীন থেকে বাংলাদেশে আসার খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নাসিরনগরে আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রতিদিনই কৌতূহলী মানুষ সুরমাদের বাড়িতে ভিড় করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগে চলচ্চিত্রে এমন গল্প দেখা যেত, এখন বাস্তবেও ঘটছে। কেউ কেউ বলছেন, ভালোবাসার এমন গল্পের পরিণতি যেন আরও সুন্দর হতো।

আইনি জটিলতায় ব্যর্থ হলেও সুরমা ও তাওজেনের সম্পর্ক নাকি এখনো অটুট। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাওজেন দেশে ফিরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবার বাংলাদেশে আসবেন।

সুরমার এক আত্মীয় বলেন, ‘তাওজেন সুরমাকে আশ্বাস দিয়ে গেছে, আইনগতভাবে সব ঠিক করে ফেরত আসবে। আমরা চাই, তাদের ভালোবাসা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিণতি পায়।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার