Logo
Logo
×

সারাদেশ

তদন্তে দোষ প্রমাণিত, তবুও প্রাইজ পোস্টিং!

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০১ এএম

তদন্তে দোষ প্রমাণিত, তবুও প্রাইজ পোস্টিং!

মানিকগঞ্জে এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও মোবাইল কল রেকর্ড করার মতো গুরুতর অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও তাকে শাস্তি না দিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রাইজ পোস্টিং; যা নিয়ে রীতিমতো শিক্ষক সমাজে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে অভিযোগ উঠেছে, স্বয়ং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিজেই অভিযুক্ত শিক্ষিকার পক্ষ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন উপেক্ষা করে শাস্তির পরিবর্তে উল্টো  গত ২৭ অক্টোবর “প্রাইজ পোস্টিং” পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

অথচ ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে তৎকালীন সরকারি এক সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) স্ট্যাটাস দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি১২(১) এবং সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৩৯ ধারা মোতাবেক তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস অধিকারী ২০২২ সালের ২৯ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে অবশ্য স্থানীয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হস্তক্ষেপে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে ওই বছরের ২৩ জুন তাকে তিরস্কার/লঘুদণ্ড প্রদান করা হয়।

এবার ওই সহকারী শিক্ষিকা শিপ্রা রানী সরকার পুনরায় আলোচনায় আসেন সদর উপজেলা স্কাউট কমিশনার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুরুন্নাহারের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও মোবাইলে কথোপকথন বিনা অনুমতিতে রেকর্ড ধারণ করার ঘটনা নিয়ে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে  ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ সত্য প্রমাণিত হয় এবং প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়— বিনা অনুমতিতে কথোপকথন রেকর্ড করা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০১০) ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ (ধারা ২৬) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

অজ্ঞাত কারণে পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের সুস্পষ্ট  দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোকুল চন্দ্র দেবনাথ বরং অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে বেতিলা-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি (প্রাইজ পোস্টিং) দেন।

জেলা শিক্ষা অফিসারের অফিসিয়াল আদেশে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাকে সংযুক্ত করা হলো।

সূত্রমতে, ওই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। অন্যদিকে, উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও সেখানে বদলির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বিতর্কিত ওই শিক্ষিকার নতুন এই পদায়নকে (সংযুক্তি) শিক্ষক সমাজ প্রভাব ও পক্ষপাতের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে।

জেলা সরকারি প্রাথমিক অফিসের এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা  শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে দাখিল করা হয়েছে।

সূত্রমতে, পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ছিল অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। যেহেতু সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তার আলোকে সুনির্দিষ্ট ধারায় বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা হোক; কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত প্রতিবেদন উপেক্ষা করে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সদর উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তদন্তে দোষ প্রমাণিত, আইনও স্পষ্ট—তবু তাকে পুরস্কৃত করা হলো। এটা কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং প্রভাবের ফল।

শিক্ষক মহল মনে করছেন, তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেওয়া প্রশাসনিক শৃঙ্খলার প্রতি চরম অবজ্ঞা। তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে বিষয়টি পুনঃতদন্ত ও  জেলা শিক্ষা অফিসারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গকুল কুমার দেবনাথ বলেন, দুটি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন । তবে বিবদমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের তীব্র অসন্তোষ বিরাজ থাকায় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মক বিঘ্নিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের পাঠদান পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে শিপ্রা রানী সরকারকে বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার বেতিলা-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে মাত্র।

উল্লেখ্য, সদর উপজেলার বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিপ্রা রানী সরকার ২০২২ সালের রমজানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ফেসবুকে ছুটি ঘোষণার বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেন। স্ট্যাটাসে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে লেখেন—অবশেষে প্রথম রোজা থেকেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সরকারি সিদ্ধান্তের বিপরীতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ওই সময় শিক্ষিকা শিপ্রা রানী সরকারে বিরুদ্ধে বিভাগী মামলা দায়ের করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরে তিরস্কার-লঘুদণ্ড দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার