Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিরল রোগে আক্রান্ত কুরআনের হাফেজ শিশু নাঈম

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

বিরল রোগে আক্রান্ত কুরআনের হাফেজ শিশু নাঈম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিরল রোগে আক্রান্ত আবির হুসাইন নাঈম। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।

জন্ম থেকে বিরল চর্মরোগে (লামিলার ইকথোসাইসিস) আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক শারীরিক কষ্টে থেকেও জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আবির হুসাইন নাঈমের। দুঃসহ যন্ত্রণা আর অসুস্থতার মধ্য দিয়েও নিজেকে গড়ে তুলছেন নাঈম।

নাঈম আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও রাবেয়া বেগম দম্পতির বড় ছেলে। তার বর্তমান বয়স ১৬ বছর। তার ৬ বছরের ছোট ভাই নূর হোসেনেরও একই অবস্থা।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের বালক নাঈমকে শারীরিক অসুস্থতা দমিয়ে রাখতে পারেনি। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তার লেখাপড়া। তিনি এখন ২৭ পারা কুরআন মুখস্থ করেছেন। আগামী বছরের মধ্যে পূর্ণ ৩০ পারার হাফেজ হবেন বলে আশা তার শিক্ষকের।

নাঈম ইছাপাশা কাদিরিয়া হাফিজিয়া নুরানি মাদ্রাসা ও এতিমখানা হেফজ বিভাগের ছাত্র। স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ ও বৃত্তি পেয়েছিল সে।

নাঈম জানায়, শরীরে অনেক কষ্ট, ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। চোখে সব সময় পানি পড়ে। রাতে ঘুমাতে পারি না। আগে চিকিৎসা চললেও এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ। মা-বাবা অনেক চেষ্টা করেছেন। তাদের আর কষ্ট দিতে চাই না বলে কোনো কষ্টের কথা কারো কাছে বলি না। আমারও মন চায় সুস্থ হতে, অন্যদের মতো সুস্থভাবে চলাফেরা করতে। তারপরও জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার।

আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে সে বলে- তিনি যা ভালো মনে করেছেন আমি তেমন আছি।

নাঈমের চোখ, মুখ, হাত, পা, নখসহ পুরো শরীরের সমস্ত জায়গায় ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। দিনে ৩ থেকে ৪ বার গোসল করতে হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় শরীরে পানি ঢালতে হয় শরীর ভিজিয়ে রাখতে। বেশির ভাগ সময়ই হাত-পা কুঁকড়ে ধরে আসে তার।

চিকিৎসার অভাবে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ধুঁকছে নাইম এবং তার আরও এক ভাই। চিকিৎসা নিতে ভারতে অথবা উন্নত কোনো দেশে যেতে হবে। অর্থ সংকটে তা আর হয়ে উঠেনি। চা দোকানি বাবার পক্ষে দুই সন্তানের সুচিকিৎসা করানো দুঃসাধ্য।

শুকুরহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ কুমার সরকার বলেন, চা বিক্রেতা হাবিব ভাইয়ের বড় ছেলে আবির হুসাইন আমাদের স্কুলে পড়ালেখা করত। সে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ছোট ছেলেকে সবাই ভয় পায়, তার সঙ্গে কেউ মিশতে চায় না বলে নূর হোসেনকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছে না। এলাকার কোনো বাচ্চা এদের সঙ্গে ভয়ে খেলাধুলা করতে চায় না।

ইছাপাশা কাদিরিয়া হাফিজিয়া নুরানি মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের এখানে প্রথম যখন আবির হুসাইন ভর্তি হয় তখন অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলত। এখন সে সমস্যা কমে গেছে সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। ছাত্র হিসেবে সে অনেক মেধাবী। 

তিনি বলেন, নাঈমের ২৭ পারা কুরআন মুখস্থ হয়ে গেছে। আগামী বছর আল্লাহর রহমতে হাফেজ হয়ে যাবে। তার এখন ভালো চিকিৎসা দরকার। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের উচিত এদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করা।

বাবা হাবিবুর রহমান জানান, দুই সন্তানকে চিকিৎসা করাতে সহায় সম্বল সব ফুরিয়েছি। এখন বাস করা ভিটাটুকু ছাড়া অবশিষ্ট তেমন কিছু নেই। চায়ের দোকানের পাশাপাশি ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করি। ছেলে দুটি যত বড় হচ্ছে আমার চিন্তা ততই বেড়ে চলছে। কয়েক মাস হলো তাদের চিকিৎসা একেবারেই বন্ধ রয়েছে।

মা রাবেয়া বেগম জানান, স্বাভাবিক জন্ম নেওয়ার পাঁচ মিনিট পর থেকেই শিশুদের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। এরপর এভাবেই শরীরের কষ্ট নিয়ে আমার সন্তান দুটি বড় হচ্ছে। শরীরের কষ্ট হলেও নাঈম সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলছে। ছোট ছেলে নূর হোসেনের সঙ্গে তার সমবয়সীরা খেলাধুলা করতে চায় না। তার সবসময় মন খারাপ থাকে। মা হিসেবে মেনে নিতে পারি না। দুই সন্তানকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে আনতে দেশের সরকার ও সমাজের সহৃদয় বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করি। চিকিৎসা করলে ওরা একটু ভালো থাকতে পারবে।

সাহায্য পাঠানো যাবে- মো. হাবিবুর রহমান, হিসাব নাম্বার: ২৮০১৯২২৯৬৮০০১, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, আলফাডাঙ্গা শাখা, ফরিদপুর।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার