Logo
Logo
×

সারাদেশ

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় থানায় অভিযোগ, রফা করলেন বিএনপি নেতা

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় থানায় অভিযোগ, রফা করলেন বিএনপি নেতা

ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশকে কোনো কিছু অবহিত না করেই ঢাকার ধামরাইয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনায় প্রহসনের সালিশি বৈঠক করেছেন এক বিএনপি নেতা।

ওই নেতার নাম মোহাম্মদ রুস্তম আলী। তিনি উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চর ডাউটিয়া এলাকার বাসিন্দা।

রোববার বিকালে এ প্রহসনের সালিশি বৈঠকের ঘটনা ঘটেছে চর ডাউটিয়া এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে। 

এ সালিশি বৈঠকে সাবেক ইউপি মেম্বার মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ৭ সদস্যের জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ আতর আলী ওরফে আতা মিয়াকে নগদ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর এ সালিশি বৈঠকের পুরো নেতৃত্ব দেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রুস্তম আলী ও মাতবর মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও নেদু মিয়া।

ওই সালিশে জুড়ি বোর্ডের সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হালিম মাতবর, মোহাম্মদ নেদু মিয়া, মো. আলমগীর হোসেন, মো. মানিক আলী, কালাচান মিয়া ও সিদ্দিক আলী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই গ্রামের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে ফুসলিয়ে একই গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সাবেক ইউপি মেম্বার আতর আলী ওরফে আতা মিয়া তার ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা খুলে ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ওই ইউপি মেম্বারকে উত্তম-মধ্যম দেয়।

এরপর ওই স্কুলছাত্রী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই ধর্ষণের চেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরে বাধা দিয়ে ওই বিএনপি নেতা রুস্তম আলী তার লোকজন নিয়ে সালিশের আয়োজন করেন। তবে এ ব্যাপারে ধামরাই থানা পুলিশকে কোনো প্রকার অবহিত করা হয়নি।

সালিশ বৈঠকের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিশের বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বিএনপি নেতা রুস্তম আলী আমাকে ডেকে পিঞ্জিরা বেগমের বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি গিয়ে দেখতে পাই পূর্ব থেকেই ১৫-২০ জন মানুষ ওই বাড়ির উঠানে বসে আছেন। আমাকে জোর করে ওখানে বসিয়ে বৈঠকের কার্যক্রম শুরু করেন। ওই বিএনপি নেতা রুস্তম আলীর পাঠানো উপরে উল্লিখিত ৭ সদস্যের জুড়ি বোর্ড ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি সদস্য আতর আলীকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। আমার উপস্থিতিতেই ওই জরিমানার টাকা যৌথভাবে নেদু মাতবর ও বিএনপি নেতা রুস্তম আলীর হাতে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা রুস্তম আলী বলেন, মেয়েটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মামলা না করে গ্রাম্যসালিশ বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। সালিশের দুই দিন পরে সভাপতি আব্দুল মালেকের বড় ছেলে মো. মনির হোসেনের উপস্থিতিতে স্কুলছাত্রীর হাতে জরিমানার ৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

তবে এ ব্যাপারে ধর্ষিতা ওই স্কুলছাত্রী জানায়, ৫ লাখ টাকা কেন, আমার হাতে কেউ ৫ টাকাও তুলে দেয়নি।

এ ব্যাপারে ধর্ষক সাবেক ইউপি মেম্বার আতর আলী বলেন, আমি অপরাধ করেছি তাই ৫ লাখ টাকাও জরিমানা দিয়েছি। পরবর্তীতে কী হয়েছে না হয়েছে তা আমার জানার বিষয় নয়। এর বিন্দুবিসর্গ আমি জানি না।

এ ব্যাপারে ধামরাই থানার এসআই ও ধর্ষণচেষ্টা অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মো. নায়েব উল্লাহ বলেন, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে মীমাংসার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। এটি সালিশে আপস অযোগ্য অপরাধ। রাষ্ট্রপক্ষ অবশ্যই এ ব্যাপারে সালিশকারী ওই মাতবরদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার