Logo
Logo
×

সারাদেশ

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার

পাবনার সাঁথিয়ায় জনতা ব্যাংক পিএলসি বনগ্রাম শাখার গ্রাহকদের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামানের দায়ের করা মামলায় আতাইকুলা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামান।

এদিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার (১৯ অক্টোবর) ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় জমে। এ সময় প্রায় শতাধিক গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করে তাদের অ্যাকাউন্ট যাচাই করে জানতে পারেন তাদের অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অর্থ নেই। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ব্যাংকের আশপাশের এলাকার জনগণ। এ সময় টাকা খোয়া যাওয়ায় ব্যাংকে গ্রাহকদের কান্নার রোল পড়ে যায়।

ব্যাংক ও গ্রাহক সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিম দীর্ঘদিন যাবত কৌশলে গ্রাহকদের ৯ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন।

গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) বনগ্রামের ব্যবসায়ী উপজেলার সাগরদারী গ্রামের আব্দুস সালাম ব্যাপারী জনতা ব্যাংক বনগ্রাম বাজার শাখায় টাকা তুলতে গেলে তার হিসাবে টাকা নেই বলে ব্যাংক হিসাবরক্ষক জানালে বাগবিতণ্ডা ও তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। এ সময় আব্দুস সালামের ডাকচিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ী গ্রাহকরা ব্যাংকে জড়ো হয়ে তাদের হিসাব নাম্বার চেক করলে দেখা যায় প্রায় গ্রাহকেরই জমা রাখা টাকা কম।

বিষয়টি ব্যাংকের পাবনার জেলা কার্যালয়কে জানালে তারা এসে ঘটনার সত্যতা পায়। এ নিয়ে রাতভর যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশ হেফাজতে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে মো. ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিনই ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় পূর্বের ব্যবস্থাপক হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী বনগ্রামের ব্যবসায়ী তনয় ভ্যারাইটিস স্টোরের মালিক তনয় সাহা জানান, তার সিসি লোনের ৪৯ লাখ টাকা হিসাব থেকে উধাও হয়েছে।

তিনি আরও জানান, টাকা হিসাব থেকে তুলে নেওয়ার পূর্বে মোবাইলের মেসেজ অপশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সাগরদারি গ্রামের সালাম ব্যাপারী বলেন, আমি গরুর ব্যবসা করি। ব্যবসার সব টাকা জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখায় রেখেছিলাম। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখি আমার হিসাব থেকে ৪১ লাখ টাকা নেই।

খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লাখ টাকার জমা রশিদ দিলেও ওই টাকা হিসাব নাম্বারে জমা হয়নি। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্টুর হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে। বনগ্রামের আব্দুল মতিনের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রাজাপুর গ্রামের হযরত আলীর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বহলবাড়ীয়া গ্রামের আবু জাফরের ৫ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বনগ্রাম জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বলেন, অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনতা ব্যাংক পাবনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মঞ্জুরুল হক জানান, বিষয়টি বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং ঢাকা হেড অফিস থেকে কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত ম্যানেজার বর্তমানে জেলহাজতে আছেন।

আতাইকুলা থানার ওসি সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন, জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামানের অভিযোগের ভিত্তিতে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিমকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পাবনা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার