রিকশাচালককে তুলে নিয়ে বিএনপি নেতার ছেলের নির্যাতন

জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

ফরিদপুরে রিকশা ভাড়া না দেয়ার প্রতিবাদ করায় হাসান প্রামাণিক (২৭) নামে এক রিকশাচালককে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার রিকশাচালক বর্তমানে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের আদমপুর এলাকার ইউসুফ প্রামাণিকের ছেলে।
হাসান প্রামাণিক বলেন, আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান শেখ বিভিন্ন সময় রিকশায় উঠে ভাড়া না দিয়ে চলে যান। বুধবার সকাল ১০ টার দিকে তার রিকশায় ওই নেতা উঠতে চাইলে নিতে অপরাগতা জানান এবং ভাড়া ফাঁকি দেয়ার বিষয় তুলে ধরেন। এরপরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতার ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৫) নেতৃত্বে তুলে নিয়ে আদমপুর বাজারে (বেড়িবাঁধ বাজার) তার নিজস্ব ফটোস্ট্যাট দোকানের পেছনের রুমে আটকিয়ে কাঠের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। পরে তার চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির পুরুষ সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সময় তিনি হাত-পা ও পিঠে জখমের চিহ্ন দেখিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তার পাশে নিশ্চুপ বসে আছে মা নিলুফা বেগম ও বাবা ইউসুফ প্রামাণিক।
হাসান বলেন, আব্দুর রহমান মাঝে মাঝে আমার রিকশায় উঠে কিন্তু ভাড়া দেয় না। গতকাল উঠতে চাইলে আমি বলি আপনিতো ভাড়া দেন না। একথা পাশে থেকে তার ছেলে শুনে। এর এক ঘণ্টা পরে দুজন লোক মোটরসাইকেলে এসে বলে তোকে রফিকের দোকানে যেতে হবে, তখন আব্দুর রহমান এসে জোড় করে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। এরপর দোকান বন্ধ করে আমারে কাঠের বাটাম দিয়ে মারতে থাকে। তার পা জড়ায় ধরলেও মারতে থাকে।
বাবা ইউসুফ প্রামাণিক জানান, গত ২০ বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে আদমপুর এলাকায় ওই বিএনপি নেতার বাড়ির পাশে এক আত্মীয়ের জমিতে বসতঘর তুলে বসবাস করে আসছেন। তার তিন ছেলের মধ্যে হাসান মেজো এবং ছোট ছেলে মানসিক রোগী। গত তিন বছর আগে হাসান প্রামাণিকের একটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। এরপর ভারতে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে কিডনিটি অপসারণ করা হয়। এতে চার লক্ষাধিক টাকা খরচ হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। পরে পরিবারের হাল ধরতে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শুরু করে হাসান নিজেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। আমার অসুস্থ ছেলেকে বিনাকারনে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। ওর একটি কিডনি নাই, দেখেন কিভাবে মারছে। আমি কঠিন বিচার চাই।
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, আব্দুর রহমান আগে আওয়ামী লীগ করত, এখন বিএনপির নেতা সেজেছে। তার ছেলেও ছাত্রলীগ ও হেলমেট বাহিনীর সদস্য ছিল। এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একজন ভদ্র ও নিরীহ ছেলেকে নির্যাতন করেছে, আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান বলেন, আমাকে একটি খারাপ কথা বলায় আমার ছেলে রাগে ও ভুলে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি নিজে চিকিৎসার জন্য খরচ দিয়ে এসেছি।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার তদন্তকারী উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন জানান, এ ঘটনায় বুধবার রাতে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় অভিযোগ করেছেন হাসানের বাবা। ঘটনাটি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তবে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। ওই ছেলেটায় নিজেই ওই দোকানে গিয়েছিল। এরপর দোকানের ভেতরে নিয়ে মারধর করেছে।