বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুরে আইনজীবীর ওপর হামলার চেষ্টা

জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
নোয়াখালীতে চাঁদাবাজির মামলায় আবদুল কাদের জসিম নামে এক বিএনপি নেতাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এতে আসামির অনুসারীরা আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিনের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে করতে গেলে সাংবাদিকের কাজে বাধা সৃষ্টি ও হামলার চেষ্টা করে আসামির অনুসারীরা।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ ড. মোরশেদ ইমতিয়াজের আদালতে শুনানি শেষে আসামিকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুরের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় আসামিপক্ষের অনুসারীরা তার ওপর চড়াও হয়ে ধাক্কাধাক্কি করে। এ সময় তারা সংবাদ সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, আসামির জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। এ সময় আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা সাংবাদিকদের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, কবিরহাট উপজেলার সৌদি প্রবাসী ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর আসামিরা আদালতে হাজির না হলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। গত ৫ অক্টোবর তারা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে পিবিআইয়ের তদন্তসাপেক্ষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর আসামিপক্ষ পুনরায় জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামি আবদুল কাদের জসিম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও কবিরহাট উপজেলার বাটাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নে সৌদি প্রবাসী মহিউদ্দিনের পরিবারের কাছে বিএনপি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জসিম। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় প্রবাসী মহিউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে গত ১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতা জসিমের দুই সহযোগী প্রবাসীর বাড়ি থেকে চাঁদাবাজির ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই টাকা গ্রহণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে ভুক্তভোগী পরিবার।
এরপর বিএনপি নেতা জসিম বাকি ৮০ হাজার টাকা তার সহযোগীদের দিতে প্রবাসী পরিবারকে মোবাইল ফোনে চাপ প্রয়োগ করেন। গত ৭ মার্চ বিএনপি নেতা জসিমের চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিএনপি তাকে বাটাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহিত দেয়। পরে এ ঘটনায় প্রবাসী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, বিএনপি নেতা জসিম ও তার সহযোগী সহিদ উল্যাহ সুজন এবং জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজশে জোরপূর্বক টাকা গ্রহণ, প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান, চাঁদা দাবি এবং দাবিকৃত চাঁদা আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কবিরহাট উপজেলার বাটাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিমকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে কোনো তদন্ত ছাড়াই জসিমের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর ছোট ভাই অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আসামি জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় কারাগারে বসে তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। এতে পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
তিনি আরও বলেন, আবদুল কাদের জসিম নোয়াখালী-৫ আসনের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত থেকে আসা বিএনপি নেতা ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গত দুর্গাপূজা চলাকালে জসিমকে প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো কোনো ধরনের অর্থ শক্তির প্রভাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, তদন্ত করা হয়নি; স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুরোধে বিএনপি নেতা জসিমের অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়। তবে তাকে বিচারক একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।