Logo
Logo
×

সারাদেশ

সিলেটের রাজনীতিতে হঠাৎ মোড়, আলোচনার শীর্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৬ এএম

সিলেটের রাজনীতিতে হঠাৎ মোড়, আলোচনার শীর্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল

নির্বাচন সামনে রেখে সিলেটের রাজনীতি হঠাৎ মোড় নিয়েছে। মত পথের ভিন্নতা থাকলেও সবাই যেন একাট্টা! উন্নয়নের ইস্যুতে তৎপর। ফলে জুলাই বিপ্লবের পর অনেকটা নীরব থাকা রাজনৈতিক ময়দান হঠাৎ সরগরম। নাগরিক দুর্ভোগ-স্থানীয় উন্নয়ন দাবিতে সোচ্চার অনেকেই।

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অনেক দলই এখন জনদুর্ভোগ-উন্নয়ন নিয়ে সিরিয়াস। এর মধ্যে সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী আলোচনার শীর্ষে।

সিলেটবাসীর বর্তমান প্রধান সমস্যা এখন সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ঘিরে। সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের দীর্ঘসূত্রিতায় ৫ ঘণ্টার সড়ক পথ পাড়ি দিতে এখন প্রায় ১৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। রেলপথের অবস্থাও নাজুক। ঘন ঘন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চরম বিপাকে সিলেটবাসী।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে রোববার এক ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট নগরীর সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, পরিবহন মালিক–শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তার এই কর্মসূচিতে।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত বৈঠকে আরিফুল হক চৌধুরী জানান, রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট নগরের দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ রেখে প্রতীকী ধর্মঘট পালন করা হবে। নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে সড়ক সংস্কারের দাবি জানানো হবে।

একই ইস্যুতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীও আগামী সোমবার দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে গণ–অবস্থান ও মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এতে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশ নেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরও উন্নয়নকে নির্বাচনি অঙ্গীকার হিসেবে সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছেন। তিনি বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে আম‚ল পরিবর্তন আনবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও উন্নয়ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা সরকারের এক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দ্রুত কাজ সম্পন্ন, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ রুটে সেতু নির্মাণ এবং দিরাই–শাল্লা এলাকায় চণ্ডীগড় ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। উন্নয়নের ২৭ দফা তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিং করেছে নতুন দল এনসিপিও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে উন্নয়ন ইস্যু সিলেটের রাজনীতিতে নতুন মোড় এনেছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ দলের প্রার্থীরাই এখন উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণায় ব্যস্ত। তবে জনগণের অংশগ্রহণে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলে নেতৃত্বের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার এই নাগরিক নেতৃত্ব শুধু বিএনপি রাজনীতিকেই নয়, সিলেটের সামগ্রিক রাজনৈতিক গতিপ্রবাহকেও নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, উন্নয়ন ইস্যুতে সরাসরি মাঠে নেমে আরিফুল হক নিজের জনপ্রিয়তাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। তিনি এখন কেবল দলের নেতা নন, নাগরিক উন্নয়নের মুখপাত্র হিসেবেও উঠে এসেছেন।

আবার বিরোধীরা বলছেন, বহুল আলোচিত দাবি তুলে নিজেরাও আলোচনায় আসতে চান অনেকেই।

এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এটা দলীয় কোনো কর্মসূচি নয়। আমি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকেই কর্মসূচি দিয়েছি। কারণ এখন ক্ষমতার চেয়ারে না থাকলেও সিলেটের মানুষ আমাকে তিন তিনবার নির্বাচিত করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও দায়বদ্ধতা আমৃত্যু। আর সিলেটের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নাগরিক এতে সহমত পোষণ করেছেন। এটাকে কেউ কেউ আলোচিত হওয়ার কৌশল বা নির্বাচন সামনে রেখে তৎপরতা মনে করলেও করার কিছু নেই। কারণ আমিতো অনেক আগেই বলেছি, প্রার্থী হবোই হবো।

একই ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত ও পর্যটন এলাকা। এই সিলেটের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগের যে অবস্থা তা অবর্ণনীয়। ৬ লেনের কথা বলে শুরু করা মহাসড়কের কাজ ৪ বছরে মাত্র ৭ ভাগ হয়েছে শুনেছি। এমন মন্থর গতি হলে জীবদ্দশাতে ৬ লেন দেখা সম্ভব হবে কি না জানি না। সড়ক ও রেল দুটো পথেরই অবস্থা বড়ই করুণ। এমন পরিস্থিতিতে আমি দলের দায়িত্বশীল হিসাবে গণমানুষের সংগঠন স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি দিয়েছি। কর্মসূচি বিএনপির হলেও সর্বস্তরের জনতার সমর্থন আছে। আলোচিত হওয়ার জন্য নয়, মহাসড়ক আর দুর্ভোগের ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই কর্মসূচি।

এদিকে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, সিলেট বরাবরই বঞ্চনার শিকার। এখানের উন্নয়ন শুধু মুখের বুলিতেই। এমনকি অতীতের দলীয় সরকারের মত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও তাই ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে হলেও স্থানীয় নেতারা উন্নয়নের ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন এটা ইতিবাচক বলেই মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, কোনো সরকার প্রধান দায়িত্ব নেওয়ার পর সিলেট সফর করেন, মাজার জিয়ারত করেন। এই রেওয়াজের এবারই ব্যতিক্রম ঘটল। প্রধান উপদেষ্টা নিজ জন্মভূমিতে কয়েক দফায় গেলেও সিলেটে আসেননি। এ নিয়ে সিলেটবাসীর আক্ষেপ রয়েছে। তিনি সফরে আসলে বঞ্চনার কথা কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পারতেন সিলেটবাসী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার