‘শুধু সত্য লেখার কারণেই আমার স্বামী হত্যার শিকার’

জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩১ এএম

‘শুধু সত্য কথা লেখার কারণেই আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ফাতেমা বেগম। তাঁর স্বামী বাগেরহাটের সাংবাদিক এসএম হায়াত উদ্দিন (৪০) শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। এ হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবিতে শনিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেস ক্লাব মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আটক করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
হায়াত উদ্দিন বাগেরহাট শহরের হাড়িখালী এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালী এলাকায় হায়াত উদ্দিনের ওপর ধারা অস্ত্র ও হাতুড়ি নিয়ে হামলা করেন একই এলাকার মো. ইসরাইল মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাগেরহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য হায়াত উদ্দিন ও ফাতেমা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে হিয়া মণির বয়স ৮। ছোট মেয়ে মারজিয়ার বয়স এখনও ১ বছর হয়নি। শনিবার স্বামীর শোকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন ফাতেমা বেগম।
হায়াতের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে পিটিয়ে আমার ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন ছেলে মামলা করেছিল। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে বিচার দেওয়ার আমাদের কোনো জায়গা নেই। তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।’
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সূত্র জানায়, মাদক কারবার, ঠিকাদারি কাজের মান, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদী ছিলেন হায়াত উদ্দিন। এ জন্য কয়েক মাস আগেও তাঁর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন মোড়ে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন হায়াত উদ্দিন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে এসে চার-পাঁচ যুবক অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা চালায়। হায়াতকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা থেকে হায়াত উদ্দিনের মরদেহ আনা হয় হাড়িখালীর বাড়িতে। হাড়িখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাঁর জানাজা হয়। সেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএএম আকরাম হোসেন, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মী ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাতেই নিজ বাড়িতে দাফন হয়েছে তাঁর।
এলাকাবাসী জানান, হায়াত উদ্দিনের ওপর হামলায় অভিযুক্ত মো. ইসরাইল মোল্লা বিএনপিকর্মী। পাশাপাশি ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হেলথকেয়ার সোসাইটির জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দেওয়া হলেই মামলা নথিভুক্ত করা হবে।