Logo
Logo
×

সারাদেশ

জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাধা, ভিডিও ভাইরাল

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৩ পিএম

জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাধা, ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি ও যুবদল নেতার বিরুদ্ধে জুমার নামাজের খুতবায় বাধা দেওয়ার ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।  

হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মহিউদ্দিন হাসান পার্শ্ববর্তী নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি জেলার চাটখিল জামায়াতে ইসলামীর আমির। 

অভিযুক্তরা হলেন- চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ ভূইয়া ও থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত সোহেল। 

এদিকে বয়ান চলাকালীন বাধা দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকেই। 

ভাইরাল হওয়া ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে বিএনপি নেতাদের বলতে শোনা যায়- জাতীয় বেইমান, এটাতো এ্যানি চৌধুরী (বিএনপি নেতা) অন্য একটি দলের নেতারে নিয়ে বলছে। এটা কি মসজিদে আলোচনার বিষয়। আপনি কুরআন থেকে কথা বলেন। জাতীয় বেইমান শব্দ তো কুরআনে নাই। আপনি একদলকে হাইলাইটস করছেন, আরেক দলকে পচাচ্ছেন। যেটি আপনি করছেন, এতে সমাজ ভাগ করছেন।  আপনি তো ইমাম, সবার নেতা আপনি। কিন্তু একটি দলকে উপস্থাপন করছেন। আপনি জামায়াত নেতা। মসজিদে জামায়াতের ওয়াজ করছেন। 

এ সময় খতিব বলেন, ইমান নিয়ে মসজিদের মধ্যে আলোচনা হবে। আর আমি কোনো ব্যক্তিকে বেইমান বলিনি। এছাড়া কোনো দলকে মসজিদে রিপ্রেজেনটেটিভ করি নাই। আপনারা বসেন। আমার বক্তব্য শুনেন এবং নোট নেন।  

অন্য আরেক বিএনপি নেতা বলেন, এ্যানি চৌধুরী কী বলছেন- ওই বক্তব্য এখানে দেওয়ার দরকার নাই। আপনি সবার ইমাম। মসজিদে এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না, যাতে করে সবার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। 

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খতিব সাহেব ‘জবানের হেফাজত’ বিষয়ক আলোচনা করছেন তার বয়ানে। এ সময় চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির এম ইউসুফ ভূইয়া ও যুবদল নেতা আবদুল মুকিত সোহেল আলোচনায় বাধা দেন। সঙ্গে তাদের কয়েকজন অনুসারিও ছিল। 

উপস্থিত মুসল্লিরা বিএনপি নেতাদের শান্ত করেন। ওই খতিবের পেছনে অভিযুক্তরা ও মুসল্লিরা জুমায় নামাজ আদায় করেন।  

হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি (উন্নয়ন কমিটি) আবদুল কাদের বলেন, কয়েক বছর ধরে মহিউদ্দিন হুজুর জুমার নামাজ পড়ান। কখনো এ ধরনের সমস্যা হয়নি।  শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ বিএনপির নেতারা হুজুরের বয়ানে বাধা দেন। এটি তারা পরিকল্পিতভাবে করেছেন। কারণ ওনারা এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি নন। তাদের বাড়ি অন্য এলাকায়।  যদি খতিবের আলোচনায় ভুল থাকে। তাহলে সেটি শালিন ভাষায় বলা যেত। মসজিদ কমিটিকে বলতে পারতেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা সেটি না করে মসজিদের ভেতরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন। শিগগিরই মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের সমন্বয়ে সভায় বিষয়টি নিয়ে কী করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

অভিযুক্ত চন্দ্রগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর মুকিত সোহেল বলেন, মব-টব বুঝি না। জুমার বয়ানে বিএনপি ও এ্যানি চৌধুরীকে নিয়ে আকার-ইঙ্গিতে খতিব কথা বলেছেন। এজন্য প্রতিবাদ করেছিলাম। তবে হুজুর সরাসরি এ্যানি ভাই কিংবা বিএনপির নাম নেননি। গণঅভ্যুত্থানের পরে খতিব সাহেব বিএনপিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে বলে না। ওনি মসজিদে জামায়াতের পক্ষ হয়ে কথা বলেন। এখন যেভাবে ওয়াজ করেন, ৫ আগস্টের আগে কখনো এভাবে বলেননি তিনি।  

খতিব মহিউদ্দিন হাসান বলেন, জবানের হেফাজত নিয়ে আলোচনা করছি। এতে কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নিইনি। তবুও বিএনপির নেতারা মসজিদে মব সৃষ্টি করে আমাকে হেনস্তা করে। বিষয়টি মসজিদ কমিটি সুষ্ঠু সমাধান না করলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। 

তিনি বলেন, জুমার আলোচনায় কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নিইনি। তবুও বিএনপি নেতারা মব সৃষ্টি করে আমাকে হেনস্তা করেন। বিষয়টি মসজিদ কমিটি সমাধান করবেন বলেছেন। যদি তারা সমাধান না করে তাহলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ মসজিদ মিশন জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ইমামরা মিম্বরে দাঁড়িয়ে হক কথা বলেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজটি করেন। কিন্তু চন্দ্রগঞ্জের একটি মসজিদে শুক্রবার একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জুমার বয়ানে বাধা দিয়েছেন। মব সৃষ্টি করেছেন। চন্দ্রগঞ্জের শুক্রবারের ঘটনা দুঃখজনক। আমরা এর নিন্দা জানাই। 

মসজিদে ইমামরা কুরআন-হাদিস অনুযায়ী আলোচনা রাখেন। তখন অনেকেই ভেবে থাকেন, হুজুর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। বিষয়টি তা নয়। যারা মসজিদে ইমামদের আলোচনায় বাধা দেয়, তাদের হেদায়াতের জন্য আমরা সব আলেম দোয়া করব। তাতেও সংশোধন না হলে, ওদেরকে সমাজের সবার বয়কট করা উচিত।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার