এক যুগ পর কালীগঙ্গা নদীতে নৌকা বাইচ, হাজারো মানুষের ভিড়

জাগো বাংলা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৬ এএম

মানিকগঞ্জের বেউথা এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। বাইচ শুরুর আগেই শিশুসহ নানা বয়সের মানুষের ভিড়ে নদীর দুই পাড় লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই আয়োজন দেখতে জেলার বাইরের দূর-দূরান্ত থেকেও হাজারো মানুষ ভিড় জমায় কালীগঙ্গা নদীর তীরে। নদীর ওপর দীর্ঘ সেতুটিও দর্শনার্থীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে প্রথম রাউন্ড শুরু হয়। আর চূড়ান্ত বাইচ অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যায়। প্রতিযোগিতায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নস’ হয় পাবনার ছিপা নৌকা শেরে-বাংলা।
ছেলেকে নিয়ে বাইচ দেখতে আসা মো. সবুজ মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে নৌকা বাইচ ছিল অন্যতম উৎসব ও নির্মল আনন্দ। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে খাল-বিল-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে নৌকা বাইচ বিলুপ্তির পথে। কালীগঙ্গা নদীতেও এক সময় নিয়মিত বাইচ হতো, এখন আর হয় না। অনেক দিন পর নৌকা বাইচ হবে শুনে আমি ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছি। আজ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে এলাম। নৌকা বাইচ আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামিয়া আহমেদ সাথী বলেন, বাংলার ঐতিহ্যের মধ্যে নৌকা বাইচ অন্যতম। বই-পত্রিকা থেকে এ বিষয়ে পড়েছি, কিন্তু সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। এবার প্রথমবারের মতো দেখে আমি অভিভূত। সাধারণ মানুষ এটিকে হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছে। আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে এসেছি, কিন্তু নদীর দুই পাড়, রাস্তা আর সেতুতে এত মানুষের ভিড় ছিল যে হাঁটাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে দারুণ উপভোগ করেছি।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই নৌকা বাইচে অংশ নেয় ৩২টি নৌকা। ছিপা, ছান্দি, ঘাসি ও খেলনা জাতের নৌকা বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিটি বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের দেওয়া হয় যথাক্রমে রেফ্রিজারেটর, এলইডি টেলিভিশন ও মাইক্রোওভেন ওভেন। আর ‘চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নস’ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি মোটরসাইকেল, যা জয় করে পাবনার শেরে-বাংলা ছিপা নৌকা। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি নৌকাকে দেওয়া হয় ট্রফি।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নৌকাগুলোর মধ্যে ছিল ময়ূরপঙ্খী, মাছরাঙা, সোনার তরী, পঙ্খীরাজ, ঝড়ের পাখি, উড়ালপঙ্খীসহ নানা নামের নৌকা।
নৌকা বাইচে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, নৌকা বাইচ আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমাদের এই উদ্যোগ।