Logo
Logo
×

সারাদেশ

পুরোনো রূপে ফিরেছে চরমপন্থি অধ্যুষিত গাংনী

Icon

জাগো বাংলা ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

পুরোনো রূপে ফিরেছে চরমপন্থি অধ্যুষিত গাংনী
• ৪ মাসে ১৪ বোমা উদ্ধার ও দুটি বোমা বিস্ফোরণ • গোপনে ও প্রকাশ্যে চাওয়া হচ্ছে চাঁদা • শনাক্ত বা গ্রেফতার হয়নি জড়িত কেউ

দীর্ঘদিন পর মেহেরপুরের গাংনীতে নিয়মিত বোমা ও চিরকুট উদ্ধারে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চাঁদাবাজরা। এরা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বোমাসহ কাফনের কাপড় ও জীবননাশের হুমকি সম্বলিত চিরকুট রেখে হুমকি দিচ্ছে।

চিরকুটে যোগাযোগের জন্য দিচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর। কোথাও কোথাও গোপনে ও প্রকাশ্যে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। তবে এসব ঘটনায় আজও জড়িতদের শনাক্ত কিংবা আটক করতে পারেনি পুলিশ।

রাজনীতিবিদরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা যে দল বা গোষ্ঠীর হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এক সময় চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল মেহেরপুরের গাংনীর। সেসময় চাঁদাবাজি, হত্যা, রাহাজানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শ্রেণি শত্রু খতম, চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের নিমিত্তে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় সেটি বন্ধ হয়। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আত্মসমর্পণ করেন। স্বাভাবিক হয় জনজীবন।

তবে সম্প্রতি আবারো ফিরে এসেছে সেই আগের চিত্র। একের পর এক বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও জীবননাশের হুমকি সম্বলিত চিরকুট রেখে যাচ্ছে ধনাঢ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর বাড়িতে। চাওয়া হচ্ছে চাঁদা। অনেকেই গোপনে তা পরিশোধ করছেন। সন্ধ্যার পরপরই বিভিন্ন স্থানে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গেলো ৪ মাসে ১৪টি বোমা উদ্ধার ও দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বোমা রেখে চাঁদা দাবি ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও আজও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি। এতে জনগণের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা অসন্তোষ। অনেকেই এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় বলে দাবি করেছেন। এলাকায় টহল না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন তারা।
তথ্যমতে, ১৭ জুন গাংনীর চরগোয়াল গ্রামের ঘাটপাড়ার আলতাব হোসেনের মুদি দোকানের সামনের রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে উদ্ধার করা হয় একটি হাতে লেখা চিরকুট। তাতে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

২ জুন রাতে বামুন্দী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের বাড়ির গেটের সামনে একটি বোমা ও চিরকুট রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

১২ মে চোখতোলা মাঠে অভিযান চালিয়ে ১টি পিস্তল, ৫টি ককটেল বোমা ও ৪০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। ডাকাতির উদ্দেশ্যে ককটেল বোমা প্রস্তুত করছিল একদল দুষ্কৃতকারী। সংবাদ পেয়ে মেজর ফারহান এবং লেফটেন্যান্ট মিনহাজের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় দুষ্কৃতকারীরা ২টি মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।

৩ মে রাতে গাংনীর পাকুড়িয়া-খড়মপুর সড়কে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করা হয়। স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।

২৭ এপ্রিল গাংনী উপজেলার রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ থেকে ৩টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া খাতুন ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনের ছাদে যান। এসময় তারা লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো বোমা সাদৃশ্য তিনটি বস্তু দেখে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে থানায় নেয়।

০১ মার্চ গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজের ওপর ৩টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা ব্রিজের ওপর এই বস্তুগুলো রেখে সড়কে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন জানান, সম্প্রতি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় বোমা ও চিরকুট উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও আজও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। এসব ঘটনায় সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাই বোমাবাজ ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন জানান, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনী স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় বোমা ও চিরকুট উদ্ধারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। পুলিশ কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারছে না। অবশ্যই এটা পুলিশ বাহিনীর ব্যর্থতা। পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম বেগমান করতে হবে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সন্ত্রাসীরা যে দল বা গোষ্ঠীর হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি একটি জেলার অর্থনীতিকে পিছিয়ে দেয়।

মেহেরপুর জেলার সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানান, দেশে বর্তমানে জবাবদিহিমূলক সরকার নেই। যার কারণে এরকম পরিস্থিতিতে পড়ছে সমাজ বা রাষ্ট্র। নিয়মিত বোমা উদ্ধার জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। নিয়মিত পুলিশ টহল বাড়াতে হবে। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল জানান, বোমা রেখে হুমকি এবং বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধারের ঘটনা সঠিক। তবে পুলিশ এসব ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার