কুমিল্লায় এনসিপির কমিটি নিয়ে বিতর্ক, মুখ খুললেন প্রধান সমন্বয়কারী

জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

কুমিল্লায় সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ নিয়ে মুখ খুলেছেন আব্দুর রহিম ওরফে জুয়েল।
মঙ্গলবার রাতে এনসিপির নিজস্ব ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া কমিটির সাথে তিনি যুক্ত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই সক্রিয় রয়েছেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন।
এতে এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরআগে মঙ্গলবার রাতে ওই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারীর পদ দেওয়া হয় আব্দুর রহিম জুয়েলকে।
এনসিপির ফেসবুক পেজে ৩১ সদস্যের ওই কমিটি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। কমিটিতে আব্দুর রহিম ওরফে জুয়েল নামের ওই বিএনপি নেতাকে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় ওই বিএনপি নেতা ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, তার এনসিপির নেতৃত্বে আসার বিষয়টি ‘গুজব’।
আব্দুর রহিম জুয়েল, জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। তিনি লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি লাকসাম উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সদস্য হন।
এনসিপির কুমিল্লা অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, জুয়েলের সঙ্গে আলোচলা সাপেক্ষেই তাকে কুমিল্লা জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে জুয়েলের দাবি, তিনি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছেন। এনসিপিতে পদ দিয়ে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। তিনি সামনে যেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে না পারেন, এ জন্যই তাকে এমন বিতর্কে জড়ানো হচ্ছে।
এনসিপি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন ওরফে সিফাত। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হয় আব্দুর রহিমের নাম। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে পাঁচজনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং বাকি ২৫ জনকে সদস্য করা হয়। আগামী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগপর্যন্ত এই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটিতে পাঁচ যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন সৈয়দ আহসান (টিটু), শরীফুজ্জামান, মাজহারুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম সরকার এবং ইব্রাহিম খালিদ হাসান। এ ছাড়া সদস্য করা হয়েছে জামাল হোসেন, জাকারিয়া শরীফ, মীর হাসিব মাহমুদ, ফজলে এলাহি (রুবেল), মো.রাসেল ভূইয়া, মো. ওয়ালিউল্লাহ শিশির, লতা সরকার, কাজি নাহিদ হোসাইন, নজরুল আমীন, খোদাদাদ ওমর ভূঁইয়া (অনিক), মাসুদ রানা, এনামুল হক, শ্রাবণী চৌধুরী, আবদুস সামাদ, খন্দকার মো. ওমর ফারুক, মো. আল আমিন, এনামুল আলমসহ ২৫ জনকে।
ফেসবুকে এই কমিটি প্রকাশের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক যেন থামছেই না। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ওই কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় আব্দুর রহিম বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কমিটিতে আমার নাম ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কমিটি প্রকাশের পর যখন বিষয়টি জেনেছি, তখন সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে এটার বিরুদ্ধে পোস্ট করেছি। জাতীয় নাগরিক পার্টি কিশোর ও তরুণদের দল। আমি ৩৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করি, আমি কীভাবে তাদের নেতৃত্বে থাকি? ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দুঃসময়েও কখনো বিএনপি ছাড়িনি, তাহলে এখন কেন ছাড়তে যাব?’
তিনি বলেন, সামনে উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আমার গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার সুযোগ আছে। এ সময় আমাকে বিতর্কিত করার জন্য পাঁয়তারা চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই আজীবন থাকবো।
এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহান বলেন, 'আলোচনা সাপেক্ষেই আব্দুর রহিম জুয়েলকে কুমিল্লা জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার মতামত নিয়ে আমরা কমিটি দিয়েছি। এখন তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। মঙ্গলবার রাতে কমিটি ঘোষণার পর তিনি বলছেন অসুস্থ তাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এরপর আমরা ফেসবুক পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নিয়েছি। শিগগিরই নতুন করে কমিটি প্রকাশ করা হবে।’