কর্মসূচি নিয়ে যে কৌশলে বিএনপি

জাগো বাংলা ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
কর্মসূচি নিয়ে যে কৌশলে বিএনপি

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে আগামী এক বছরের জন্য বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশের ছক করছে দলটি। প্রতিটি ইস্যুতে এসব কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা তাদের। দলের নীতিনির্ধারকরা এই ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরে ১৬ জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। এরপর দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগে একই কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতি সপ্তাহে একটি বিভাগে সমাবেশ করা হবে। এতে চলে যাবে আড়াই থেকে তিন মাস। এরপর কর্মসূচি যাবে জেলা পর্যায়ে। জেলা পর্যায়ে শেষ হলে আবার ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচি শেষ হতেও অন্তত তিন মাস সময় যাবে। এভাবে চলবে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত।

২০২৩ সালের মার্চের পর আবার সারা দেশে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবে বিএনপি। সারা দেশের এই কর্মসূচি দুই মাস ধরে চালানোর ইচ্ছা দলটির। এর মধ্যে সুধীজন, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এরই মধ্যে সিলেটে বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি মতবিনিময়সভা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ধারণা করছেন, এসব কর্মসূচি পালন করতে বছরখানেক লাগবে। আর আগামী বছর জুন-জুলাইয়ের পর নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হবে। এই সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে দলটির।

বিএনপির দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আন্দোলনমুখী হয়েছে। তাই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে ধরে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, গত ২২ আগস্ট থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৭২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২৯ জনের বেশি। আহত হয়েছেন এক হাজার ৭১১ জন। নিহত হয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে ভোলায় দুজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গত কয়েকটি সভার মূল্যায়ন হচ্ছে, এত হামলা-মামলার পরও তৃণমূল পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি সফলভাবে পালন করেছেন নেতাকর্মীরা। আবার কিছু উপজেলায় দুর্বলতাও নজরে এসেছে। কর্মসূচি পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আরো কয়েকটি উপজেলার বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, এবারের কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশের সংগঠন সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা গেছে। আবার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় সব কর্মসূচিতে লোক সমাগম ছিল বেশি। হামলার পরও নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ২২ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় টানা কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি।

বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিক্ষিপ্ত আন্দোলনের কারণে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দল ব্যর্থ হয়েছিল। এবারের চলমান আন্দোলনে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা ভালো করেছেন। এখন রাজধানীর ১৬টি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এটা মহানগরের নেতাদের জন্য পরীক্ষা। তাঁরা এটা কতটুকু সফল করতে পারেন তার ওপর আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর কমিটি নতুন। নতুন কমিটির নেতারা সংগঠন কতটুকু গোছালেন তা বোঝা যাবে এই আন্দোলনের মাধ্যমে। ঢাকার কর্মসূচিতে বাধা এলে মহানগর নেতারা কিভাবে তা সামাল দেন সেটা এখন দেখার বিষয়।

ঢাকায় এরই মধ্যে পাঁচটি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পঞ্চম কর্মসূচি ছিল মিরপুরে। তিনবার জায়গা বদল করেও সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। সরকারি দলের স্থানীয় কর্মী আর পুলিশের বাধায় সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলনের গতি সব সময় এক রকম থাকে না। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের গতি পায়। আবার কোনো একটি ঘটনার রেশ কেটে গেলে আন্দোলনের তীব্রতাও কমে আসে। ঘটনার গতি-প্রকৃতি যাই থাকুক সরকারবিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি।

কর্মসূচিতে বাধা ও তিন কর্মী নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির নেতারা ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং কানাডা দূতাবাসের রাজনৈতিক সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ছবি এবং টিভিতে প্রচারিত ভিডিওচিত্রসহ নিজেদের অবস্থান জানানো অব্যাহত থাকবে বলে দায়িত্বশীল এক নেতা জানান।