অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীকে দেশে নিষিদ্ধ করা ও ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে বাংলাদেশের শত্রু ছিল জামায়াতে ইসলাম, সেই জামায়াতে ইসলামকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। যেই দল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল সেই দলের কোনো অধিকার নাই বাংলাদেশে রাজনীতি করার, সেই দেশে নির্বাচন করার।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির জাতীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি সালে যে নির্বাচন হবে তাতে জামায়াতকে ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা্দেরকে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না, যোগ করেন তিনি।
আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, অভ্যুত্থান পরবর্তী ইউনূস সরকার তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান জনতার বেহাত হয়েছে। সরকার নারীদের, সংখ্যালঘু মানুষের কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দাবিদার একটি গোষ্ঠী নতুন করে লুটপাট ও দখলদারত্বের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গণতান্ত্রিক সরকার এদেশে হয়নি। আমাদের সরকার এদেশে প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার, যারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করবে, তিনি বলেন।
সিপিবি সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি ভারত কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়।’
সেলিম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।’
অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য মুহাম্মদ ইউনূস যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে তার বৈধতা হবে না।
ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার, তিনি বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এখন যে উন্নয়ন চলছে, তার লক্ষ্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন করা। এতে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী উন্নয়ন দেশে দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে। তাই পুঁজিবাদী উন্নয়ন ও বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এ লড়াই একা করা যাবে না। এ লড়াইয়ে ঐক্য দরকার। সামাজিক বিপ্লব ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে বাটা সিগনাল, সায়েন্সল্যাব, ঢাকা কলেজ, গাউসিয়া মার্কেট থেকে বামে ঘুরে আবারও বাটা সিগনাল, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে শেষ হয়।