Logo
Logo
×

রাজনীতি

গণভোট ইস্যুতে পিছিয়ে গেল বিএনপির ফাঁকা আসনে প্রার্থী ঘোষণা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৮ এএম

গণভোট ইস্যুতে পিছিয়ে গেল বিএনপির ফাঁকা আসনে প্রার্থী ঘোষণা

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট ইস্যুতে বিএনপির ফাঁকা রাখা ৬৩ আসনে প্রার্থী চুড়ান্ত করা আটকে গেছে। একই কারণে পিছিয়ে পড়েছে আন্দোলনের মিত্র ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ফাঁকা আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।

ফাঁকা রাখা ৬৩ আসনে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর কাছেও তাদের প্রার্থীদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই এসব আসনে বিএনপির ও মিত্রদলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। প্রাথমিকভাবে আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য ২৩টি আসন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা।

গত ৩ নভেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি নেতাদের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব এবং মিত্র দলগুলোকে আসন ছাড়ার জন্য বাকি ৬৩ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধসহ সহিংসভাবে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকরা। মনোনয়ন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দলের হাইকমান্ড।

মনোনয়ন ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ আসনগুলোর মধ্যে আছে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ( ভোটাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া-কসবা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর), নওগাঁ-৪ (মান্দা), সাতক্ষীরা-২ (সদর-দেবহাটা), সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ-আশাশুনি), ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া), হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর), কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ), নাটোর-১ (লালপুর-বাঘাতিপাড়া), রংপুর-৩ আসন, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার), মাদারীপুর-১, মেহেরপুর-২ (গাংনী),  চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), নরসিংদী-৪ আসন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসন, চট্টগ্রাম-১৬, নোয়াখালী-৫, ঠাকুরগাঁও-৩ এবং রাজশাহী-৪ ও ৫।

এর মধ্যে মাদারীপুর-১ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন কামাল জামান মোল্লা।  স্থানীয় বিএনপির বিক্ষোভের মুখে তার মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে সিলেট-৪ প্রথমে মনোনয়ন ঘোষণা করা না হলেও পরে সেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আরিফুল হক সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেখানে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া পরে তার বাসায় আরিফুল হক চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর) আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দেন।

কোনো কোনো এলাকায় মনোনয়ন বঞ্চিতরা এখনো বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে কয়েকটি এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরেও মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামতে পারেন। 

বিএনপির হাইকমান্ড এখন এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এসবসহ ফাঁকা আসনে প্রার্থী ঘোষণায় দেরি হলে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করছেন দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।

এদিকে ফাঁকা ঢাকা-৯, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, মাদারীপুর-২, গাজীপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, ঝিনাইদহ-৪ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য রাখা আসনগুলোর কয়েকটিতে সেসব দলের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব পার্থ ও ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএমে’র ববি হাজ্জাজের নাম চূড়ান্ত হয়ে আছে।

অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে আছে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বা তার ছেলে, কুমিল্লা-৭ আসনে এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নড়াইল-২ আসনে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রবের নাম।

এ ছাড়া জোট হলে ঢাকা-৭ আসনে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, নরসিংদী-৩ আসনে এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ও পাবনা-১ আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জুনায়েদ আল হাবিব এবং গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে পটুয়াখালী-৩ ও ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রার্থী করা হতে পারে।

তবে জোট ও মিত্রদের জন্য আসন বণ্টনের হিসাব-নিকাশ এখনো চুড়ান্ত হয়নি। বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারাও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী শর্ত মেনে চললে এনসিপিকে ঢাকার দুটি আসনসহ ছয় থেকে আটটি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। অবশ্য বিষয়টি দুই দলের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি। এখনো নেতাদের মধ্যে নেপথ্যে দরকষাকষি চলছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার