শহর বা গ্রামে অনেকেই শখের বসে কবুতর পোষেন, কিংবা বাড়িতে পায়রার আনাগোনা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, পায়রার পালক, মল বা তাদের শরীরের ধূলিকণা থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জেন মানুষের ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এ রোগটি পরিচিত ‘পায়রা ফ্যানসিয়ার্স লাং’ (Pigeon Fancier's Lung) বা চিকিৎসা পরিভাষায় হাইপারসেনসিটিভিটি নিউমোনাইটিস (Hypersensitivity Pneumonitis) নামে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
কবুতর পুষলে কীভাবে ফুসফুসের রোগ হতে পারে এবং এর ঝুঁকি কাদের বেশি, তা বিস্তারিত জানানো হলো:
১. রোগের কারণ: অ্যালার্জেন এবং প্রদাহ
কবুতর ফ্যানসিয়ার্স লাং হলো এক ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে।
অ্যালার্জেন উৎস: কবুতরের পালকের গুঁড়ো, শুকনো মল এবং শরীরের ক্ষুদ্র ধূলিকণায় থাকা প্রোটিন (Antigens) যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিয়মিত ফুসফুসে প্রবেশ করে, তখন এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।
প্রতিক্রিয়া: ফুসফুসের সূক্ষ্ম বায়ুথলি বা অ্যালভিওলি (Alveoli) এই প্রোটিনগুলিকে ক্ষতিকারক আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলস্বরূপ, ফুসফুসে তীব্র প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন শুরু হয়।
ফলাফল: এই প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে ফুসফুসের টিস্যুগুলি মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা দেয় এবং ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
২. কাদের সমস্যা হতে পারে?
এ রোগটি সবার হয় না। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই নির্দিষ্ট প্রোটিনগুলির প্রতি সংবেদনশীল বা অ্যালার্জিক, তাদেরই সমস্যা দেখা দেয়।
পেশাগত ঝুঁকি: যারা দীর্ঘদিন ধরে পায়রার খামারে বা যেখানে প্রচুর কবুতরের আনাগোনা আছে সেখানে কাজ করেন।
পোষা প্রাণী: যারা বাড়িতে নিয়মিত পায়রা বা এই জাতীয় পাখি পুষছেন।
কম ভেন্টিলেশন: বদ্ধ জায়গায় বা কম বাতাস চলাচলকারী ঘরে পায়রা রাখলে ঝুঁকি বাড়ে।
৩. রোগের লক্ষণসমূহ
এই রোগের লক্ষণগুলি দুটি প্রধান রূপে দেখা দিতে পারে:
১। তীব্র (Acute): পাখির সংস্পর্শে আসার ৪-৬ ঘণ্টা পর জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ফ্লু-এর মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া।
২। দীর্ঘস্থায়ী (Chronic): ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, শুকনো কাশি, ওজন কমে যাওয়া, এবং ক্লান্তিবোধ। এই ক্ষেত্রে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪. প্রতিকার এবং সুরক্ষা
যদি আপনি পায়রা পোষেন বা আপনার বাড়িতে পায়রার সমস্যা থাকে, তবে এই ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন:
কবুতর অপসারণ: রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত কবুতরকে বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া বা অন্য স্থানে রাখা প্রয়োজন। এটিই একমাত্র নিশ্চিত প্রতিকার।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: পাখির খাঁচা বা থাকার জায়গা পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই ভালো মানের মাস্ক ব্যবহার করুন।
বায়ু চলাচল: ঘরে যেন পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল বা ভেন্টিলেশন থাকে, তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
চিকিৎসা: লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে পালমোনোলজিস্ট (Pulmonologist) বা ফুসফুস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব।