Logo
Logo
×

জাতীয়

অধিনায়কসহ তিন শতাধিক সদস্যের গণবদলির নেপথ্যে বিস্ময়কর রহস্য

র‍্যাব-১৫ এ কী ঘটেছিল?

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পিএম

অধিনায়কসহ তিন শতাধিক সদস্যের গণবদলির নেপথ্যে বিস্ময়কর রহস্য

ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে অনিয়ম, মামলায় কম দেখানো এবং আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগকে কেন্দ্র করে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানসহ তিন শতাধিক সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। যদিও অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে র‍্যাব মিডিয়া উইং দাবি করেছে—এটি নিয়মিত বদলির অংশ।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কামরুল হাসান কমান্ডার বিএন–এর অনুমোদনের ভিত্তিতে উপপরিচালক (প্রশাসন) মেজর ফয়সাল আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে গত ১৯ নভেম্বর প্রথম দফায় ১৯৮ জন এবং একই তারিখে দ্বিতীয় দফায় ২০০ জন সদস্যকে বদলি করা হয়। পরে গত ২৭ নভেম্বর জারি হওয়া আরও একটি প্রজ্ঞাপনে ৭৪ জন সদস্যকে বদলি করা হয়। তিন দফায় বদলিকৃতদের মধ্যে তিন শতাধিক সদস্যই র‍্যাব-১৫ এ কর্মরত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

র‍্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইং এর পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেকাব চৌধুরী জানিয়েছেন, বছরের পর বছর একই জায়গায় কর্মরত থাকায় র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানকে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নেয়ামুল হালিম খান পিএসসি, যিনি করোনাকালে যশোর সেনানিবাসে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩৭ বীর-এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। র‍্যাবের দাবি, সাম্প্রতিক বদলিগুলো নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ।

তবে মাঠপর্যায়ের অসমর্থিত একাধিক সূত্র বলছে, র‍্যাব-১৫ এর বিরুদ্ধে হওয়া ইয়াবা আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগের দুটি বিতর্কিত অভিযানই গণবদলির নেপথ্যে রয়েছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ৭ সেপ্টেম্বর, যখন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পশ্চিম পাড়ার একটি বসতঘরে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ৮৯ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৩০ টাকা উদ্ধার দেখায় র‍্যাব। স্থানীয় তিন মাদক ব্যবসায়ী—সাদ্দাম হোসেন, মহিউদ্দিন ও যুবদল নেতা হেলাল উদ্দিনসহ আটজনকে অভিযানে পলাতক দেখিয়ে মামলা করা হয়। মামলার অন্যতম আসামি হেলাল উদ্দিনের প্রধান সহযোগী সেলিমকে আড়াল করতে স্থানীয় সাংবাদিক সেলিম উদ্দিনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন অভিযোগ করেন—নামের মিল থাকায় তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে, যদিও তিনি কোনোভাবেই এমন অপরাধে জড়িত নন। এ ঘটনায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা আত্মসাৎ হওয়ার গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। নভেম্বরের শুরুতে র‍্যাব সদর দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

অন্য ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর টেকনাফের লেদা এলাকায়। র‍্যাব-১৫ এর সিপিসি-১ (টেকনাফ) এর একটি দল ডজন মামলার আসামি ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মৃত লাল মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে। পরে জব্দতালিকায় তার কাছ থেকে ৭টি ইটের টুকরা এবং ২টি কাঠের লাঠি উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। উভয় অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান, আর তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত টেকনাফ এফএস কমান্ডার কর্পোরাল ইমামকে এসব বিতর্কিত অভিযানের নেপথ্যের মূল ব্যক্তি বলে দাবি করেছে র‍্যাব সংশ্লিষ্ট কিছু সূত্র।

র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ইয়াবাকাণ্ডসহ গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে মিডিয়া উইং এর পরিচালক এম জেড এম ইন্তেকাব চৌধুরী বলেন—কেউ অপরাধে জড়িত থাকলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র‍্যাব তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে এবং এ ক্ষেত্রেও অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি পেতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার